অরণ্য ধ্বংসের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

Arpan

অরণ্য ধ্বংসের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। 

বন্ধুরা আজকে আমি নিয়ে এসেছি পরিবেশবিজ্ঞান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ topic নিয়ে। এই topic টি তোমরা ভূগোলে দেখতে পাবে। এটি খুবই একটি মজাদার topic আজকে আমরা আলোচনা করবো অরণ্য ধ্বংস বা বৃক্ষচ্ছেদন বা বনভূমি ধ্বংস (Deforestation) সম্পর্কে। আজকে আমরা বৃক্ষচ্ছেদন সংজ্ঞা (Definition of Deforestation), অরণ্য ধ্বংস বা বনভূমি ধ্বংসের কারণ (Causes of Deforestation), অরণ্য ধ্বংস বা বনভূমি ধ্বংস বা বনচ্ছেদনের ফলাফল (Effects of Deforestation) সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি নিচে। এটি মাধ্যমিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি আমার খুবই উপকার করেছে। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share করতে পারেন।

অরণ্য ধ্বংস বা বৃক্ষচ্ছেদন বা বনভূমি ধ্বংস (Deforestation)

পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বনভূমি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পরিবেশে অক্সিজেন প্রদানই শুধু নয়, পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে বহু ক্ষেত্রেই - বনভূমির অবদান অনস্বীকার্য। অরণ্য সম্পদ কোনো দেশের সমৃদ্ধি উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়াররূপে গণ্য হওয়ায় একে 'সমৃদ্ধি উন্নতির জীবনরেখা' নামে অভিহিত করা হয়। তাই বনভূমিকে 'সবুজসোনা' বলে।

বর্তমানে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জনবিস্ফোরণের দৌরাত্ম্যে এই 'সবুজসোনা' পরিমাণ ক্রমহ্রাসমান। এস. পি. আগরওয়ালের একটি সমীক্ষা থেকে ধারণা করা হয় যে, 2025 সালে প্রতি মানুষ পিছু বনভূমির পরিমাণ হবে 0.46 হেক্টর, যা 1996 সালে ছিল প্রতি মানুষ পিছু 0.7 হেক্টর এবং 34 শতাংশ ভূমির হ্রাসপ্রাপ্তির বিষয়টি মানবজাতির পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। শুধু হ্রাসপ্রাপ্তি নয়, বনভূমি হ্রাসের ফলে পারিপার্শ্বিক ভারসাম্য, জীবজন্তুর জীবনহানি, জীবজগতকে এক গভীর সংকটের সম্মুখীন করেছে।

বৃক্ষচ্ছেদন সংজ্ঞা (Definition of Deforestation)

পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরিভাগের সবুজ আস্তরণের প্রাকৃতিক, মানবিক জৈবিক উপায়ে ধ্বংস বা হ্রাস পাওয়া কিংবা গাছগাটা এবং ভূপাতিত করা কোনো অরণ্য এলাকাকে উদ্ভিদশূন্য ভূমিতে পরিণত করাকে অরণ্যসংহার বা বনশূন্যকরণ বলে। 1874 সালে 'Deforestation' শব্দটি অধিক মাত্রায় প্রচলিত হয়। পরবর্তীকালে বনচ্ছেদন বিষয়ে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে-

স্কফির মতে (2003), "Deforestation is the conversion of forest areas to no forest land use such as an able land, patterns, urban use logged or waste land!

UNFCCC (2001)- মতে, “বৃক্ষচ্ছেদন হলো, the direct human induced conversion of forested land to non-forested land."

FAO (1960) বনচ্ছেদনের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। যেমন-

  • 2000 সালে FAO- বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে- "A reduction of canopy cover or stocking within the forest."
  • FAO (2001)-এর মতে, বৃক্ষচ্ছেদন বলতে অন্য কোনো ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বনভূমির পরিবর্তন বা ন্যূনতম 10 শতাংশ সীমার নীচে উদ্ভিদের আবরণের দীর্ঘস্থায়ী হ্রাসপ্রাপ্তিকে বোঝায়।
  • FAO (2003)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, অরণ্যবিনাশ হলো বনভূমি থেকে প্রাপ্ত সুবিধার। যেমন-কাঠের জোগান, জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, অন্যান্য দ্রব্য পরিষেবা প্রাপ্তি সামগ্রিক কার্যকরী জোগানের দীর্ঘমেয়াদি হ্রাসকরণ।
  • FAO (2006) বৃক্ষচ্ছেদনের সামান্য পরিবর্তন করে। তাতে বলা হয়, অরণ্য ধ্বংস হলো বনভূমির মধ্যে এক পরিবর্তন যা, কোনো স্থানে গঠন বা কার্যাবলিকে নেতিবাচক প্রভাবিত করে এবং ফলস্বরূপ বিভিন্ন দ্রব্য বা পরিষেবা জোগানের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। সমগ্র বিশ্বে

বিউব্রেকারের মতে (1984) 1900 সালে অরণ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় 7000 মিলিয়ন হেক্টর। 1975 সালে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়ায় 2890 মিলিয়ন হেক্টর এবং এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে 2000 সালে বনভূমির পরিমাণ দাঁড়াবে 2370 মিলিয়ন হেক্টর।

বৃক্ষচ্ছেদন (Deforestation)
বৃক্ষচ্ছেদন (Deforestation)

সাম্প্রতিককালে 1990-2020 সালের মধ্যে 0.9 শতাংশ বনভূমি এবং গাছের আচ্ছাদন 4.2 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আগামী 20-40 বছরের মধ্যে যদি বনাঞ্চল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা না পায় তবে মানবজাতিও বিলুপ্তির পথে হাঁটবে। ভারতে 3000 খ্রিস্টপূর্বে মোট ভূখণ্ডের প্রায় 40 শতাংশ অরণ্যাবৃত ছিল, যা বর্তমানে 22 শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিকে ভয়ংকর প্রভাবিত করতে চলেছে।

অরণ্য ধ্বংস বা বনভূমি ধ্বংসের কারণ (Causes of Deforestation)

FAO কর্তৃক প্রকশিত তথ্য অনুসারে, 1976 সালে পৃথিবীতে মোট বনভূমির পরিমাণ যেখানে ছিল 423 কোটি হেক্টর। 1998-1999 সালে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় 429.71 কোটি হেক্টর। গত 22 বছরে 3.29 কোটি হেক্টর বনভূমি এই নিশ্চিহ্নকরণকে বর্তমানে বহুবিধ পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী করা যেতে পারে।

বনচ্ছেদনের কারণ-

প্রাকৃতিক কারণ:-

[1] দাবানল, [2] ঘূর্ণাবর্ত, [3] সুনমি, [4] ধ্বস, [5] অ্যাসিড বৃষ্টি এবং [6] অগ্ন্যুৎপাত।

আর্থসামাজিক কারণ:-

[1] বনভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তরকরণ, [2] ঝুমচাষ, [3] পশুচারণ, [4] বহুমুখী নদী পরিকল্পনা এবং [5] খনিজ আহরণ।

সামাজিক কারণ:-

[1] নগরায়ন, [2] কাঠ সংগ্রহ, [3] জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, [4] বেআইনিভাবে বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক কারণ

[1] দাবানলপ্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে অনেক সময় অরণ্যে আগুন লেগে প্রচুর পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হয়। এই প্রকার আগুনকে দাবানল বলে। দাবানল সৃষ্টি হল শুধু বনভূমির বিনষ্ট হয় তাই নয় মাটির ভৌত রাসায়নিক ধর্মের আমূল পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে

  • মাটি সচ্ছিদ্রতা হারায়
  • অনুস্রাবন বিঘ্নিত হয়
  • গাছের মূল বিনষ্ট হয় এবং 
  • ভূপৃষ্ঠপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি। 

উদাহরণস্বরূপ, বলা যায়, 2007 সালে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ফলে 1800 বর্গকিমি অঞ্চলের বনভূমি জ্বলে নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি, 2020 সালের 27 মে ভারতের উত্তরাখণ্ডে দাবানলের কারণে 51.34 হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়। এই 2020 সালে অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী দাবানলের কারণে প্রায় 18.626 মিলিয়ন হেক্টর জমি, ৪০০ মিলিয়নের বেশি প্রাণী মারা যায়, যা বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করে।

দাবানল
দাবানল

[2] ঘূর্ণিঝড়সাইক্লোন, টর্নেডো, হারিকেন, টাইফুন প্রভৃতির ফলে ঝড়ের তীব্রতায় বহু গাছ বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 2020 সালে 'আমফান' ঘূর্ণিঝড়ের ফলে 44 হাজার হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

[3] সুনামিসমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে যে দৈত্যাকার সুউচ্চ সমুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি তা উপকূলে আছড়ে পড়ে উপকূলীয় বনভূমি ধ্বংস করে। উদাহরণস্বরূপ 2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে বৃহৎ সুনামি আন্দামান, সুমাত্রার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আছড়ে পড়ে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করে।

[4] ধস: অতি বৃষ্টি, ভূমিকম্প প্রভৃতি কারণে পাহাড়ি অঞ্চলে ধ্বসের সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে বহুক্ষেত্রেই সরলবর্গীয় মিশ্র বনভূমির বিনাশ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ 1899 সালে দার্জিলিং জেলায় অতি বৃষ্টির কারণে সংঘটিত ধংসের প্রভাবে বনভূমির আয়তন হ্রাস পায়।

[5] অ্যাসিড বৃষ্টিনাতিশীতোয় অঞ্চলের দেশগুলিতে অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে বহু গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। নরওয়ে, কানাড প্রভৃতি দেশের বিস্তীর্ণ বনভূমি অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বিনষ্ট হয়ে পড়ছে।

[6] অগ্ন্যুৎপাতঅরণ্যসংকুল আগ্নেয় পার্বত্য অঞ্চল গুলিতে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত হলে (বিশেষ করে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলিতে) লাভা প্রবাহের ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হয়। ভারতের ব্যারেন দ্বীপে সাম্প্রতিক সময় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রচুর বনভূমি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া জাপান, ইটালি, মেক্সিকো, পেরুতে এই কারণে বহু বনভূমি নষ্ট হচ্ছে।

আর্থ-সামাজিক কারণ

[1] বনভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তরকরণ: বর্তমানে পৃথিবীতে জনবিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার তাগিদে বহু বনভূমি বা তৃণভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। FAO-এর হিসাব অনুসারে, ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদাপূরণের জন্য পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় 25 লক্ষ হেক্টর জমিকে কৃষিকাজের আওতায় আনা হয়, যার মধ্যে অধিকাংশই বৃক্ষচ্ছেদনের মাধ্যমে কৃষিজমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহদাকৃতির তৃণভূমি অঞ্চলগুলির (যেমন-রাশিয়ার স্তেপ অঞ্চল, উত্তর আমেরিকার প্রেইরি, দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস) বিস্তীর্ণ এলাকাও এখন কৃষিজমিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। ফলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে।

[2] ঝুমচাষস্থানান্তর কৃষি বা ঝুমচাষের প্রভাবে দক্ষিণ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চলে ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেন হয়ে চলেছে। ভারতের ওডিশা উত্তর-পূর্বরাজ্য যেমন মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অসম, মিজোরাম, ত্রিপুরায় স্থানান্তর কৃষি দ্বারা যথাক্রমে 5298 বর্গকিমি/বছর, 760 বর্গকিমি/বছর, 730 বর্গকিমি/বছর, 700 বর্গকিমি/বছর, 500 বর্গকিমি/বছর, 170 বর্গকিমি/বছর এলাকা প্রভাবিত হচ্ছে। যার ফলে বনভূমি পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।

[3] পশুচারণজনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুধুমাত্র খাদ্যশস্যই নয়, পশুজাত দ্রব্যের চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ বনভূমির আয়তন সংকুচিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভূমধ্যসাগরীয় নাতিশীতোয় অঞ্চলে এই কারণে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। FAO (1998) -এর হিসাব অনুসারে, 1916 সালে পশুচারণভূমির পরিমাণ ছিল 325 কোটি হেক্টর, বর্তমানে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে 345.7 কোটি হেক্টর।

[4] বহুমুখী নদীপরিকল্পনানৌ-পরিবহন, মৎস্যচাষ, কিংবা, কৃষিতে জলের সরবরাহ বজায় রাখতে অনেক সময় নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জলাধার তৈরি করা হয়। এর ফলে নদীর নিম্ন অববাহিকায় জলের সরবরাহ বজায় থাকলেও জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্যে উচ্চ অববাহিকা সংলগ্ন বনভূমি প্লাবিত হতে পারে। এই প্লাবনের জলে দীর্ঘদিন যাবৎ দাঁড়িয়ে থাকলে বৃক্ষের শিকড়কে পচিয়ে দিতে পারে। ফলস্বরূপ বনভূমি ধ্বংস হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের মধ্যপ্রদেশের সর্দার সরোবর প্রকল্প, গুজরাটের ইন্দিরা সাগর প্রকল্প, উত্তরাখণ্ডের তেহরি বাঁধপ্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

[5] খনিজ আহরণবিভিন্ন মূল্যবান খনিজ পদার্থ (যেমন-আকরিক লোহা, অভ্র, কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ) উত্তোলনের জন্য উন্মুক্ত খনি খনন করা হয়। ফলস্বরূপ বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস হয়।

সামাজিক কারণ

[1] নগরায়ণপৃথিবীব্যাপী দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নগরায়ণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতসহ ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে এই সমস্যার কারণে বনভূমি ধ্বংস করে শহরের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ভারত, চিন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে 2030 সালের মধ্যে এই সমস্যা বৃহৎ আকার ধারণ করবে।

[2] কাঠ সংগ্রহগৃহ নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঠের প্রয়োজন। এই কাঠ সরবরাহের জন্য মানুষকে মূলতঃ বনভূমির ওপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা, জানালা পরিবহন কার্যে বনভূমির কাঠ ব্যাপক আকারে ব্যবহার করায় অরণ্যের সংকোচন ঘটছে। মোট উৎপাদিত কাঠের 33 শতাংশ নির্মান কাজে, 5-6 শতাংশ কাগজ উৎপাদনে, 1 শতাংশ কৃত্রিম তন্তু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

[3] জ্বালানির চাহিদা1992 সালে ব্রাজিলের রিও. ডি. জেনিরোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নেপাল, নাইজেরিয়া, সুদান, তানজানিয়া, মালি, ইথিওপিয়া, অথবা বারকিনা ফাসোর মতো দেশগুলিতে ৪০ শতাংশ জ্বালানিই আসে কাঠ থেকে। সুতরাং, জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য অরণ্যের ধ্বংস ঘটছে।

[4] বেআইনি ভাবে বৃক্ষচেন্দনবিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাঠের চোরাচালানি ব্যবসা চলছে। এই ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দেশে বিদেশের বাজারে কাঠ অবৈধভাবে বিক্রি করতে গিয়ে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বেআইনি ভাবে অরণ্যের বৃক্ষ কেটে চলেছে। ফলে বনভূমির অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।

জৈব প্রভাবক (Biological Factors)

বনভূমি সংলগ্ন কৃষিজমিতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনে অনেকক্ষেত্রেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাসায়নিক সার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলির অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে বহু ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ কৃষিজমি থেকে অরণ্যে প্রবেশ করে এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে সামগ্রিকভাবে অরণ্য বিনাশের পথকে প্রশস্ত করে।

অরণ্য ধ্বংস বা বনভূমি ধ্বংস বা বনচ্ছেদনের ফলাফল (Effects of Deforestation)

অরণ্য নিধনের ফলফল অত্যন্ত মারাত্মক। পৃথিবীকে অরণ্য থাকা উচিত মোট জমির আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ। অরণ্য বিনাশের প্রভাব অত্যন্ত সুদূর প্রসারিত। অরণ্য নিধনের কুফলগুলি হলো-

প্রাকৃতিক প্রভাব

[1] ভূমিক্ষয়: বৃক্ষসমূহ তাদের শিকড়ের সাহায্যে শিলা মৃত্তিকাকে দৃঢ় সংঘবদ্ধ রাখে। বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে শিলা মৃত্তিকা শিথিল হয়ে পড়ায় ঢালু অঞ্চলে ধস নামে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। ভারতের শিবালিক অঞ্চল, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ স্থানে বনভূমি হ্রাসের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হচ্ছে।

[2] গ্রিন হাউস প্ৰভাৰবনভূমি প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস CO₂-কে শোষণ করে পরিবেশে CO₂- ভারসাম্য বজায় রাখে। অরণ্যচ্ছেদনের ফলে CO₂-এর মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। 1850-1950 সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বেড়েছে 0.50° সেলসিয়াস এবং 1900-2000 সালের মধ্যে বেড়েছে 10° সেলসিয়াস। 

[3] বন্যা খরা সৃষ্টিঅতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদন ভূমিক্ষয় বাড়ায়। ভূমিক্ষয় জলাভূমির নাব্যতা বা গভীরতার হ্রাস ঘটায়। ফলে বন্যার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। আবার বনভূমি ধ্বংস করলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় ফলে শুষ্ক অঞ্চলে খরার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। 

[4] মরুকরণবিজ্ঞানীগণ হিসাব করে দেখেছেন প্রতি বছর দুই লক্ষ বর্গকিমি এলাকা মরুভূমির অন্তর্গত হচ্ছে গাছকাটার ফলে। মরু অঞ্চলে নিকটবর্তী স্থানে বনভূমি বিনষ্ট হলে মরুভূমির বালি বাধাহীনভাবে বায়ুতাড়িত হয়ে মরুকরন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। ভারতে প্রতিবছর 0.5 কিলোমিটার করে জমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

বনচ্ছেদনের ফলাফল (মরুকরণ)
বনচ্ছেদনের ফলাফল (মরুকরণ) 

আর্থ সামাজিক কারণ

[1] কৃষির উপর প্রভাব: বনচ্ছেদনের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় জমির উর্বরতা যেমন হ্রাস পায়। অন্যদিকে বৃষ্টিপাতও কমে যায়। ফলস্বরূপ কৃষিজ উৎপাদন সামগ্রিকভবে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ভারতে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান মধ্যপ্রদেশে মাটির উর্বরতা হ্রাস পেয়ে কৃষি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

[2] কান্ঠশিল্পের চাহিদামোট আহরিত কাঠের 35 শতাংশ কাঠশিল্পের জন্য, 5 শতাংশ কাঠমন্ড প্রস্তুতিতে, 1 শতাংশ কৃত্রিম তন্তু প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এর জন্য কাঠের নিয়মিত জোগান দরকার। ফলে একই সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধি দ্রুত লাভ করার উদ্দেশ্যে বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে।

[3] বাঁধ নির্মাণমৎস্যচাষ বা বৃষ্টির জলের সরবরাহ বজায় রাখতে অনেক সময় নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জলাধার তৈরি করা হয়। এর ফলে নদীর নিম্ন অববাহিকায় জলের সরবরাহ বজায় থাকলেও জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য নদী অববাহিকা সংলগ্ন বনভূমি প্লাবিত হয়। ফলে বনভূমি ধ্বংস হয়। এর কারণে স্থানীয় এলাকায় জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

[4] পরিবহনের ওপর প্রভাবপরিবহনের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি যেমন-বাস, জাহাজ, প্রভৃতি নির্মাণের জন্য কাঠের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক। তাই অরণ্য ধ্বংস হওয়াই এই ধরনের যানবাহন নির্মাণ শিল্পগুলি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক প্রভাব

অরণ্য বিনাশের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া আরণ্যক উপজাতিদের জীবন- যাত্রাকে ব্যাহত করে নানারকম সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সাঁওতালরা বৃক্ষকে পুজো করে। সুতরাং, ধর্মীয় অনুভূতি অরণ্যকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। অরণ্যের মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতি, তাদের গৃহখাদ্যের অভ্যাস প্রভৃতি অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল। অনেক উপজাতি-পিগমি, বান্টু প্রভৃতিরা মাচা বেঁধে ঘর নির্মাণ করে। জ্বালানি কাঠের জোগান সম্পূর্ণভাবে অরণ্যে বসবাসকারী উপজাতিরা অরণ্য থেকে সংগ্রহ করে, তারা অরণ্যের মধ্যে উৎসব পালন করে। ফলে অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে এবং মানুষ স্থানচ্যুত হবে।

 

আরও জানুন:

1. জীব বৈচিত্র্যের অবলুপ্তির কারণগুলি লেখ? (What are the causes of Biodiversity loss)|

2. জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের কি কি সমস্যা রয়েছে। (What are the problems behind the conservation of bio-diversity?)

3. জীববৈচিত্র্য বিনাশের কারণ ও  প্রভাব আলোচনা করো (Causes and Effect of Loss of Biodiversity)। 

4. গ্রিন হাউস গ্যাস- গ্যাসগুলির উৎস, প্রভাব ও ফলাফল, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করো। 

5. বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global warming) কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো। 

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।