সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর।
![]() |
সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল |
ভূমিকা:-
সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের এক ঐতিহাসিক বিদ্রোহ যা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম নামেও পরিচিত। এটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সিপাহীদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল। বিদ্রোহটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধের রূপ নেয়।
সিপাহী বিদ্রোহের কারণ:
পলাশী যুদ্ধের ১০০ বছর পর অর্থাৎ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রায় সারা দেশজুড়ে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ বিস্তারিত হয়, যা মহাবিদ্রোহ নামে পরিচিত। ভারতীয় সিপাহীদের দ্বারা এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটলেও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল এই বিদ্রোহেই। মহাবিদ্রোহের পেছনেই ছিল নানা ধরনের কারণ, সেগুলি হলো –
1. রাজনৈতিক কারণ:-
- লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ঝাঁসি সাতারা, নাগপুর, কর্ণাটক সহ বিভিন্ন রাজ্যে গ্রাস করেন। এর ফলে এই রাজ্যগুলি ইংরেজদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।
- ব্রিটিশরা কু-শাসনের অজুহাতে অযোধ্যা ও নাগপুরের রাজপ্রাসাদ লুণ্ঠন করেন এবং নবাব ও তার নিকট আত্মীয়দের রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেয়। ফলে রাজ্যের প্রজারা ব্রিটিশদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
- ব্রিটিশ শাসিত রাজ্য গুলির মধ্যে ত্রিবাঙ্কুরের সেনাদের ব্রিটিশ ভাতা, ওই সব সেনা ব্রিটিশ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
2. অর্থনৈতিক কারণ:-
রাজ্য দণ্ড ধারণ করলেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসলে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারা এদেশকে শোষণ করতে থাকে। যেমন-
- এদেশের অফুরন্ত কাঁচামাল তারা লুটে নিয়ে যায়।
- শিল্প বিপ্লব জাতক সামগ্রী বহুমূল্যে বিক্রি করে এদেশের বাজারে।
- ঐতিহ্যপূর্ণ কুটির শিল্প ধ্বংস করে নিজেদের শিল্প বিপ্লব সামগ্রিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
- নীল চাষ শুরু করে সোনার ফসল (ধান) উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
- বৈষম্যমূলক রাজস্ব ব্যবস্থা চাষীদের সর্বস্বান্ত করে।
- চূড়ান্ত সম্পদ নিকার মাধ্যমে এদেশকে দারিদ্র্যের গভীরে ঠেলে দেয়। তাই ক্ষুব্ধ দেশবাসী বিদ্রোহে ফেটে পড়েছিল।
3. সামাজিক কারণ:-
কোম্পানির আমলে সাদা আদমি ও কালা আদমির মধ্যে এক অবাঞ্চনীয় ও আসাস্থকর ব্যাবধান গড়ে ওঠে, একে অন্যকে ঘৃণা করে। তাকে সামাজিক পরিবেশ দূষিত হয়ে ওঠে। তিক্ত সম্পর্কের ফলে সতীদাহ প্রথা নিবারণ, বিধবা বিবাহ প্রচলন, শিশু হত্যা নিবারণ, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন, রেলপথ, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন ইত্যাদিও দেশবাসী ভালো চোখে দেখেননি। বিশেষত রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয় এইভাবে তৈরি হয় সামাজিক কারণ।
4. ধর্মীয় কারণ:-
ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসন্তোষ মহাবিদ্রোহকে দ্রুত ত্বরান্বিত করেছিল-
- খ্রিস্টান পাদরিরা প্রকাশ্যে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের নিন্দা করে বিক্ষুব্ধ হিন্দু ও মুসলমানদের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করতে চেয়েছিল। এতে ভীত হয়ে ভারতবাসী ব্রিটিশ শাসন অবসানে সচেষ্ট হয়।
- ব্রিটিশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর কর চাপালে ভারতবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাসের আঘাত লাগে।
- ওয়াহাবি আন্দোলন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তীব্র জিহাদ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই আন্দোলনে মুসলিম সিপাহীদের ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।
5. সামরিক কারণ:-
সেনাবাহিনীর অসন্তোষ দেশে বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। তথাকথিত সিপাহী বা ভারতীয় সৈন্যদের উপর কর্তৃপক্ষের যে বিমাতৃসুলভ আচরণ, যা তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। যেমন-
- তাদের প্রতিপক্ষাত পূর্ণ দূর ব্যবহার
- বেতন বৈষম্য
- পদোন্নতি রোধ
- কালাপানি (সমুদ্র) পার হতে বাধ্য করা
- ধর্মীয় সংস্কারের প্রতি তীব্র অমর্যাদা
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল:
3.সামরিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন:-
- ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনিতে ভারতীয় সৈন্যসংখ্যা হ্রাস করা হয়েছিল।
- গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয় দের নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছিল।
- ভারতীয়দের উচ্চ পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি রোধ করা হয়।
- ভেদ নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।
আরও জানুন: