বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান লেখ।
 |
| বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান |
ভূমিকা:-
শ্রীরামপুর মিশনের খ্রিস্টান মিশনারি ও বিশিষ্ট ভাষাবিদ উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত বই পত্র কম দামে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাতে শুরু করলে বাংলা ভাষার গণ শিক্ষার প্রসার সম্ভব হয়।
শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান:-
1. বাংলা অনুবাদ:- এই মিশন কর্তৃক ছাপাখানা থেকে বাংলাভাষায় বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখ্য হল- কেরির নির্দেশনায় বাইবেল, রামরাম বসু ও মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখের উদ্যোগে রামায়ণ, মহাভারত বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রভৃতি বাংলার অনুবাদ।
2. বাংলা গদ্য সাহিত্য:- এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড। ফলে পাঠকদের হাতে বাংলা গদ্য সাহিত্য পৌঁছেছিল। রামরাম বসু রচিত “প্রতাপাদিত্য চরিত্র”।
3. পাঠ্যপুস্তক রচনা:- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বিনামূল্যে বা অল্পমূল্যে ছাত্রদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে “ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি” প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে এই সোসাইটির মাধ্যমে হাজার হাজার কপি পাঠ্যবই শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ছাপানো হয়।
4. গণশিক্ষার প্রসার:- এই ছাপাখানা কর্তৃক মুদ্রিত বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুদিত গ্রন্থ বিভিন্ন বাংলা সাহিত্য, পাঠ্যপুস্তক সুলভে বাংলার সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। ফলে বাংলার গনশিক্ষার ব্যাপক প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছিল।
5. প্রগতিশীলতার প্রচার:- উইলিয়াম কেরি সাহেব ভারতের পুরনো শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক সাহিত্য বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে গোঁড়ামী ও কুসংস্কার দূর করে তাদের মধ্যে প্রগতিশীলতার প্রচার করেন।
6. পত্রপত্রিকার প্রকাশ:- শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মার্শম্যান সম্পাদিত মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা যথাক্রমে “দিগদর্শন” ও “সমাচার দর্পণ” ছাপা হত। এছাড়া অন্যান্য ভারতীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে সম্পাদিত পত্রপত্রিকা এই ছাপাখানা থেকে বের হত। যেমন- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের “তত্ত্বাবোধিনী”, রামমোহনের “সংবাদ কৌমুদী” প্রভৃতি। ফলে সংবাদপত্রের বিকাশ ঘটেছিল।
আরও জানুন:
