ভারতের জাতীয়তাবোধ বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ভারতমাতা চিত্রটির অবদান লেখ।
ভূমিকা:-
উনিশ শতকে বিভিন্ন রচিত গ্রন্থ যেমন- আনন্দমঠ, বর্তমান ভারত, প্রভৃতি ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন, তেমনি ২০ শতকে তৎকালীন বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে কিছু চিত্রকর ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করেছিল- তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন “নব্য ব্যঙ্গচিত্রের জনক” অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার “ভারত মাতা” চিত্রটি শিক্ষিত এবং প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
পটভূমি/প্রেক্ষাপট:-
তিনি ভারতের ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সমান্তরাল সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই উদ্দেশ্যে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের (১৯০৫-১৯১১) সময় হিন্দুদের ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে তিনি “ভারতমাতা” চিত্রটি অঙ্কন করেন।
স্বরপ:-
1. স্বদেশীয়ানা:- তার চতুর্ভূজা ভারতমাতার চার হাতে রয়েছে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শ্বেত বস্ত্র। এগুলি মূলত ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এগুলির দ্বারা শিল্পী স্বদেশী আন্দোলনের যুগে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশীয়ানা ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেন।
2. শান্তির প্রতীক:- সশস্ত্র আন্দোলন সুস্থ জাতীয়তাবাদের বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। তার ভারত-মাতার হাতে কোন অস্ত্র নেই। এর দ্বারা তিনি স্বদেশী ভাবনায় সশস্ত্র আন্দোলন কে দূরে রেখেছেন।
3. জাতীয়তাবাদের চেতনা:- ২০ শতকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মিছিলের সামনে ভারতমাতা চিত্রটি রাখা হত। নবজাগ্রত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনই ছিল এই চিত্রটি অঙ্কনের অনুপ্রেরণা।
মন্তব্য:-
“ভারতমাতা” চিত্রটির মধ্যে কেউ কেউ হিন্দু স্বদেশিকতার প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চিত্রকর বাস্তবে হিন্দু স্বদেশিকতার উগ্র সমর্থক ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু ভগিনী নিবেদিতা এই চিত্রটির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন।
আরও জানুন: