বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা
বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি সমিতির ভূমিকা লেখ।
 |
| বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। |
ভূমিকা:-
বৈপ্লবিক আন্দোলনের ধারায় ভারতে বাংলা ছিল অন্যতম কেন্দ্রস্থল- যা কালক্রমে বিপ্লবের তীর্থভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বাংলার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভূমিকা:-
1. অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা:- ভারতের চরমপন্থী মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন অরবিন্দ ঘোষ। তিনি তার জ্বালাময়ী বক্তৃতা দ্বারা বাংলার যুবকদের মনে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়েছিল। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দশম স্থান হওয়া সত্ত্বেও তিনি সরকারি উচ্চ পরের চাকরি বর্জন করেন। তিনি মা ভবানী নামে শপথ নিয়ে যুবকদের দেশের মুক্তিতে আত্ম বলিদান এর আহ্বান জানায়। তার সম্পাদিত “বন্দেমাতরম” পত্রিকার মাধ্যমে বিপ্লবের আদর্শ প্রচার করেছিলেন।
2. বারিন্দ্র কুমার ঘোষ:- অরবিন্দ ঘোষের চাই বারীন ঘোষ বাংলার তরুণদের বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা দেয়। তিনি ভবানী মন্দির রচনার মাধ্যমে চরমপন্থী ভাবধারার বীজ রোপন করেন। তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে মুরারীপুকুর বাগান বাড়িতে নিযুক্ত হন। তিনি “যুগান্তর পত্রিকা” প্রকাশের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আদর্শ প্রচার করতে শুরু করেন।
3. ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী:- বারীন ঘোষের নির্দেশে এরা দুজনে বিহারের মুজাফফরপুরে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড কে হত্যা করার জন্য অভিযান চালান। তারা 1908 খ্রিস্টাব্দের 30th April রাতে কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়লে ভুল বসত সেই গাড়িতে মিস ও মিসেস কেনেডি বোমার আঘাতে মারা যান। প্রফুল্ল নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। অপরদিকে ক্ষুদিরাম বসু মুজাফফরপুর মামলা দ্বারা বিচারে ফাঁসির সাজা হয়। তিনি বিখ্যাত গান তৎকালীন বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা দেয় “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি”।
4. বাঘা যতীনের বুড়ি বালামের যুদ্ধ:- যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ইতিহাসে বাঘাযতিন নামে খ্যাত। ইনি বুড়িবালামের যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। উড়িষ্যার বুড়িবালাম নদীর তীরে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে তার সঙ্গী- জ্যোতিষ পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে, 20 মিনিট যুদ্ধে চিত্তপ্রিয় মারা যান। পরের দিন 10th সেপ্টেম্বর ভোরে বাঘা যতীনের মহাপ্রাণ ঘটে। জ্যোতিপ্রিয়ের 14 বছরের জেল হয়। নীরেন ও মনোরঞ্জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনা বুড়ি বালামের যুদ্ধ নামে বিখ্যাত।
5. বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি:- অনুশীলন সমিতি, ঢাকা অনুশীলন সমিতি, আত্মন্নতি সমিতি প্রভৃতি গুপ্ত সমিতি বিপ্লবী আন্দোলনে প্রসারে সাহায্য করেছিল। এদের গোপন কার্যকলাপ বিপ্লবীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্ম বলিদানে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এছাড়া অন্যান্য গুপ্ত সমিতি গুলি হল- সাধনা এবং সুহাদ সমিতি, ঢাকায় মুক্তি সংঘ, ফরিদপুরের ব্রত সমিতি।
