ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের ভূমিকা লেখ।
![]() |
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের ভূমিকা |
ভূমিকা:-
1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতীয় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সর্বোচ্চ পরিণতি। পরবর্তী আন্দোলন গুলি থেকে এর চরিত্র ছিল ভিন্ন, ব্যক্তি ছিল অনেক বেশি। গান্ধীজির পরিচালিত এই আন্দোলন শুরু হলেও তা ক্রমশ গণচরিত্র ধারণ করে। 1942 খ্রিস্টাব্দের 8th August বোম্বাই অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গৃহীত হয়।
1942 খ্রিস্টাব্দের 8th August মধ্যরাতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ- গান্ধীজি, জহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখকে গ্রেপ্তার করলে পরের দিন 9th August সাধারণ মানুষ নিজেদের হাতে আন্দোলনে নেতৃত্ব ভার তুলে নেয়। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল হরতাল এবং বিক্ষোভ করে তোলে।
বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় সরকার:- এই সময় মেদিনীপুরের তমলুক, মহারাষ্ট্রে সাতারা, উড়িষ্যার তালচের, আসামের নওগাঁ, উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি প্রভৃতি অঞ্চলে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
“তাম্রলিপ্ত
জাতীয় সরকার”
প্রতিষ্ঠাতা:- সতীশচন্দ্র সামন্ত, সুশীল ধাড়া, কুমদিনী ডাকুয়ার এর নেতৃত্বে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্থায়িত্ব:- 1942 খ্রিস্টাব্দে থেকে 1944 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় 2 বছর এই সরকার স্থায়ী হয়।
কার্যাবলী:-
- বিদ্যা বাহিনী নামক একটি সামরিক বাহিনী গঠন যার অন্তর্গত ছিল গোরিলা দল, ভগিনী সেনা ও আইন শৃঙ্খলা কমিটি।
- পটাশপুর, কাঁথি প্রভৃতি স্থানে জেলাথানা গঠন এবং তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সরকারি প্রশাসন স্থাপন।
- বন্যা ও দুর্ভিক্ষের সময় আত্ম জনগণের কাছে প্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো এবং স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিকে আর্থিক সাহায্য দান করা।
- ধনী ও জোতদার দের থেকে উদ্বৃত্ত ধান, চাল কেড়ে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করেছিল।
- এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছিলেন সালিশি সভা গঠনের মাধ্যমে।
সমাপ্তি:- 1944 খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে এই জাতীয় সরকার ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
উপসংহার:- সর্বোপরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আবিভুক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত তাম্রলিপ্ত থানা দখল করতে গিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরা ও অন্যান্যরা প্রাণ বিসর্জন দেন। তাদের আত্মত্যাগ ও উৎসর্গতা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তাম্রলিপ্ত ও জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই সরকারের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে বর্ণিত হয়ে থাকবে।