জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের কি কি সমস্যা রয়েছে ? (What are the problems behind the
conservation of bio-diversity?)
উত্তর:
সুফল থাকা সত্ত্বেও, জীব বৈচিত্র্যের ধংস অনবরত হয়ে চলেছে এবং এর ফলে এটাই প্রমাণ হয় যে জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ কৌশলে ঘাটতি রয়েছে। অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে অনুন্নত বিশ্বের দেশ গুলিতে জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ শুধুমাত্র কাগজপত্রে লিখিত আকারে রয়েছে বাস্তবে এর সঠিক দেখা যায় না। উন্নত দেশের সমাজ সম্পদের অস্থিতিশীল ব্যবহার করে ও বিত্তমান জীবনযাত্রা পালন করেন। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নানাপ্রকার প্রকল্পে ভারতে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা রয়েছে। যথা—
i) একক প্রজাতি সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব প্রদান:-
একটি অথবা দুটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির সংরক্ষণের অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়, যাদের বিলুপ্ত হওয়ার সীমানায় পৌঁছাবে। এর দ্বারা কোন সুদূর প্রসারী লভ্যাংশ পাওয়া যায় না।
ii) সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনার ক্রমোচ্চ মডেল:-
উপনিবেশীয় রাজত্বকালে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উর্দ্ধে ছিল। পরবর্তীকালে সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার ক্রমোচ্চ মডেলে সংরক্ষণের বিষয়টি স্থানীয় বন্য অধিবাসীদের নজরে নিয়ে আসা হলেও এতে স্থানীয় অধিবাসীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বরং এখানে সর্বোচ্চ ছিল কাটন্তদানের মালিকরা। যার ফলে স্থানীয় মানুষের শ্রম ও বন্যপ্রাণীর উপর সংরক্ষণের ধারনার অবসান হয়। বনে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ এই সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার অংশগ্রহণ করতে না পারায় সংরক্ষণেন প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যভুষিত হয়।
iii) বৃহদাকৃতির প্রাণীর সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব প্রদান:-
1970 সালের পর থেকে বৃহৎ আকৃতির প্রাণীদের উপর সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। স্থানীয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় শুধুমাত্র এই ধরণের প্রাণীদের সংরক্ষণের উপর। যার ফলে অন্যান্য ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী ও সংকটাপন্ন এলাকার উপর গুরুত্ব হারিয়ে যায়। শুধুমাত্র বাঘ, হাতি, সিংহ, গণ্ডার প্রভৃতি প্রাণীদের উপর সংরক্ষণের জোর দেওয়া হলেও বিভিন্ন প্রকার লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং সরীসৃপ, উভচর, মৎস্য ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি।
iv) যথেষ্ট সচেতনতার অভাব:-
বর্তমানে শহরের বস্তুভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার ব্যবহারকৃত বস্তুর উৎস সম্পর্কে সচেতনতার অভাব অধিক দেখা যায়। ঐতিহ্যবাহী সমাজ ব্যবস্থার মূলত: উদ্ভিদ ও প্রাণীদের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত করে কিন্তু তাদের সংরক্ষণ কিংবা স্থিতিশীল ব্যবহার সম্পর্কে ধারণার যথেষ্ট অভাব দেখা যায়।
v) স্থ-স্থানে (In-site) ও বহিঃস্থানে (Ex-site) সংক্ষণের অনুকুল পরিকাঠামো:-
উন্নয়নশীল দেশ শুধুমাত্র অর্থক্ষুদায় ভোগে, তাই সংরক্ষণের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে পারে না। আবার অধিকাংশ দেশে সরকারী সংস্থা দ্বারা বেসরকারী সংস্থা বা সংগঠন এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে না। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন- বিশ্ব পরিবেশ সুবিধা (International Environment Facility – GEF) এই সমস্ত দেশে সংরক্ষণ প্রকল্পে সহায়তা করে থাকে।
vi) অর্থনীতির বিশ্বায়নের নতুন চাহিদার মধ্যে দ্বন্দ্ব:-
বর্তমানে প্রতিযোগীতামূলক অর্থনীতির চাপে ভূমিরূপের ব্যবহারে পরিবর্তণ, পরিবেশগত অবনমনে ইত্যাদির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য ক্রমাগত ক্ষতি হচ্ছে। এই ধরণের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে গরিব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।