ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে (Classification of natural flora of India)।
বন্ধুরা আজকে আমি নিয়ে এসেছি দশম শ্রেণীর ভূগোলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে। আজকের প্রশ্ন হচ্ছে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of natural flora of India)। এটি মাধ্যমিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি আমার খুবই উপকার করেছে। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share ও করতে পারেন।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of natural flora of India)
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegatation in India)
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Natural Vegetation of India) মূলত ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, এবং ভূমির গঠন অনুসারে করা হয়। ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে সাধারণত
5 ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
A. ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য,
B. ক্রান্তীয় পাতাঝরা বা পর্ণমোচী অরণ্য,
C. কাঁটাবেশ বা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ বা মরু উদ্ভিদ,
D. পার্বত্য উদ্ভিদ এবং
E. উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বা লবনাম্বু অরণ্য।
A.
ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য (Tropical Evergreen Forest)
অবস্থান:- ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, উত্তর পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মণিপুরে এই অরণ্য দেখা যায়।
প্রাকৃতিক পরিবেশ:- ভারতের যে সমস্ত অঞ্চল বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সেমির বেশি, গড় উয়তা 25°-35° এবং আর্দ্রতা সারাবছর বেশি সেই সমস্ত অঞ্চলে এই ধরনের বনভূমি গড়ে উঠেছে।
উদ্ভিদ:- এবনি, রোজউড, আয়রনউড, শিশু, মেহগনি, গর্জন, চাপলাস, সিঙ্কোনা, আবুলস, বাঁশ, বেত প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ।
বৈশিষ্ট্য:-
[1] চিরহরিৎ
বৃক্ষ: জলের
অভাব হয় না বলে সারাবছর গাছগুলি সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে। তাই একে চিরসবুজ অরণ্য বলে।
[2] দ্রুত
বর্ধিষ্ণু: অধিক বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা এবং সূর্যালোকের জন্য উদ্ভিদ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
[3] বৃক্ষ: সূর্যালোকের
জন্য অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় গাছগুলি সুদীর্ঘ (40-50 মিটার) হয়।
[4] শাখাপ্রশাখা: গাছগুলি
প্রচুর শাখাপ্রশাখা যুক্ত হয়।
[5] নিবিড় অরণ্য: এই অরণ্যের তলদেশ লতাগুল্ম, আগাছায় পূর্ণ থাকে, তাই সহজে প্রবেশ করা যায় না। উদ্ভিদরা অত্যন্ত বড়ো বড়ো হয়। এই অরণ্যের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের ঘন সমাবেশ লক্ষ করা যায়।
[6] চাঁদোয়া সৃষ্টি: ঘনবৃক্ষের
অসংখ্য ডালপালা, সুপ্রশস্থ, লম্বা পাতা গাছের মাথায় পরপর মিলে খোলা ছাতার মতো নিশ্ছিদ্র আচ্ছাদন বা চাঁদোয়া সৃষ্টি করে।
[7] বিষাক্ত কীটপতঙ্গের উপস্থিতি: এই অরণ্যের মাটি ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে এবং বিষাক্ত কীটপতঙ্গে ভরতি।
[৪] পুষ্পায়ন ও ফল: উদ্ভিদের
সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন ভালো হওয়ায় গাছগুলিতে সারাবছর ফুল ফোটে ও ফল ধরে।
ব্যবহার:- অরণ্যের সম্পদ খুবই মূল্যবান ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম।
[1] কাষ্ঠ সম্পদ: আবলুস,
মেহগনি, সেগুনকাঠ আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, জাহাজ, বাস ও ট্রাকের কাঠামো এবং রেলের স্লিপার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
[2] জ্বালানি কাঠ: গুরুত্বহীন বহুগাছ জ্বালানির কাজে লাগে।
[3] উপজাত দ্রব্য:
- বন্য রবার গাছের রস থেকে প্রাকৃতিক রবাব তৈরি হয়।
- বাঁশ, বেত, র্যাউন লতা দিয়ে চেয়ার, টেবিল তৈরি হয়।
- সিঙ্কোনা থেকে কুইনাইন, কোকো থেকে কোকেন তৈরি হয়। এছাড়াও এই অরণ্য থেকে উপজাত দ্রব্যরূপে মধু, মোম, লাক্ষা, ইত্যাদি পাওয়া যায়।
B.
পর্ণমোচী অরণ্য (Tropical Deciduous Forest)
শুষ্কতা
ও
আর্দ্রতার ওপর ভিত্তি করে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী আবার দৃষ্ট প্রকার যথা-
[1] শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য,
[2] আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য।
1.
শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য
অবস্থান:- উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ পূর্বাংশ, বিহারের পশ্চিমাংশ, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে এই অরণ্য গড়ে উঠেছে। ভারতের সর্বাধিক (29%) অরণ্য এই প্রকার।
পরিবেশ:- ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 50-100 cm শীতকাল শুষ্ক এবং গ্রীষ্ককাল আর্দ্র, গড় 25°-30° সে উন্নতা এবং উয়তার বার্ষিক প্রসর অধিক, আদ্রতা সারাবছরই 47 শতাংশের কম, সেই সমস্ত অঞ্চলে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য গড়ে উঠেছে।
উদ্ভিদ:- কাঁটাযুক্ত গুল্ম ও ঝোপ, ঘাস, কুল, পলাশ, মহুয়া, কেঁদু, কুসুম, বাবলা, সিসল, খয়ের, শাল, শিমুল ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:-
- গাছগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে জন্মায় ও উদ্ভিদের ঘনত্ব কম।
- উদ্ভিদগুলি ক্ষুদ্রাকার, উচ্চতা 10 মিটারের মধ্যে।
- শুষ্ক ঋতুতে জলের খরচ বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ গাছ গ্রীষ্মের লতাপাতা ঝরিয়ে ফেলে।
2.
আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য
অবস্থান:- হিমালয় পাদদেশীয় তরাই ও ডুয়ার্স, পশ্চিমবঙ্গ ও অসম সমভূমি, ছোটোনাগপুর মালভূমি, ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাঞ্চলে এই অরণ্য গড়ে উঠেছে। ভারতের 27% অরণ্য এই প্রকার।
পরিবেশ:- বার্ষিক গড় 100-200 cm বৃষ্টিপাত, শীতকাল শুষ্ক এবং গ্রীষ্মকাল আর্দ্র, গ্রীষ্মে 27°-30°C ও শীতে 15°-20°C উয়তা ও উন্নতার বার্ষিক প্রসর অধিক, আর্দ্রতা সারাবছরই কম (60-75%)
উদ্ভিদ:- শাল, সেগুন, শিমুল, মহুয়া, আম, জাম, মহুয়া অশ্বস্থ জারুল কুসুম, শিরীষ, গামাবট, চন্দন, অর্জুন, তুঁত ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:-
[1] গ্রীষ্মের আগে গাছগুলির পাতা ঝরে যায় ও বর্ষাকালে নতুন পাতা জন্মায়।
[2] গাছগুলি
মাঝারি উঁচু (25-60 মিটার)
[3] উদ্ভিদের ঘনত্ব অনেক বেশি ও বনভূমি গভীর।
[4] বৃক্ষগুলির কাঠ খুব শক্ত ও অত্যন্ত মূল্যবান।
[5] অধিকাংশ
গাছের ছাল পুরু ও অমসৃণ।
[6] গাছগুলি বহু শাখা প্রশাখাযুক্ত হয়।
[7] গাছগুলির কাণ্ডে বর্ষবলয় সুস্পষ্ট।
ব্যবহার:- ভারতে এই অরণ্যের ব্যবহারিক গুরুত্ব সর্বাধিক-
[1] এই অরণ্যের শাল, সেগুন প্রভৃতি গাছের মূল্যবান কাঠ নানান আসবাবপত্র, যানবাহনের কাঠামো, দরজা-জানালা, রেলওয়ে স্লিপার প্রভৃতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
[2] শিমুল
গাছের নরম কাষ্ঠ দেশলাই কাঠ, বাক্স ও খেলনা প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
[3] চন্দনগাছ
আসবাবপত্র নির্মাণ, ওষুধ ও সুগন্ধি তেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
[4] বাঁশ ও সাবাই ঘাস কাগজ শিল্পে কাষ্ঠমণ্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
[5] কেন্দুপাতা
বিড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং শালপাতা বিভিন্নভাবে (বাটি) ব্যাবহৃত হয়।
[6] নিকৃষ্ট শ্রেণির কাঠ স্থানীয় জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
[7] এছাড়া এই অরণ্য থেকে উপজাত দ্রব্যরূপে মোম, মধু, গঁদ, লাক্ষা ধুনা ও রজন, বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্য, নানাবিধ ফল প্রভৃতি পাওয়া যায়।
C.
ক্রান্তীয় মরুউদ্ভিদ (Tropical Desert Forest)
অবস্থান
রাজস্থানের থর মরুভূমি ও তৎসংলগ্ন গুজরাট ও পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিমাংশে এই ধরনের উদ্ভিদ গড়ে উঠেছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ:- যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টি 25 সেমির কম, উয়তা বেশি (30° 35°C), আর্দ্রতা কম এবং বাষ্পীভবনের হার বেশি, সেখানে এই উদ্ভিদ জন্মায়। একে জেরোফাইট বা জঙ্গল উদ্ভিদ বলে।
উদ্ভিদ:- ক্যাকটাস, ফনিমসা, বাবলা, খেজুর, অ্যাকাসিয়া, কাঁটাঝোপ ও বিভিন্ন ঘাস।
[1] মাটির
গভীর থেকে জল সংগ্রহের কারণে মূলদীর্ঘ ও শাখাপ্রশাখাযুক্ত।
[2] দেহের
জল
যাতে পাতা দিয়ে বাষ্পীভূত হতে না পারে তার জন্য উদ্ভিদের পাতাগুলি ছোটো ও কখনো কখনো কাঁটায় পরিণত হয়।
[3] মূলত কাঁটাজাতীয় ছোটো ছোটো গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে জন্মায়। উদ্ভিদের সংখ্যা খুবই কম।
[4] উদ্ভিদের পাতা থাকে না। থাকলেও অতি ক্ষুদ্র এবং কাঁটায় রূপান্তরিত হয়।
[5] কান্ড ও পাতা কিউটিকল যুক্ত এবং মোমজাতীয় পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে যাতে জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে না যায়।
ব্যবহার:-
[1] বিভিন্ন ঘাস স্থানীয় গবাদি পশুর উৎকৃষ্ট খাদ্যরূপে ব্যাবহৃত হয়।
[2] ঘাসের
ওপর ভিত্তি করে চারণভূমি গড়ে উঠেছে।
[3] খেজুর, তাল ফলরূপে মানুষ খাদ্য হিসেবে সংগ্রহ করে।
[4] বিভিন্ন ক্যাকটাসের রসালো কান্ড থেকে ভেষজ ঔষুধ তৈরি হয়।
[5] বাবলা, তেশিরা গাছের কাঠ জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
D.
পার্বত্য উদ্ভিদ (Mountain Forest)
অবস্থান:- ভারতের উত্তরপ্রান্তে অরুণাচলপ্রদেশ, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, সিকিম, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের বিভিন্ন উচ্চতায় উয়তা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যে বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন-
[1] চিরহরিৎ অরণ্য: পূর্ব হিমালয়ের 100 মিটার উচ্চতা পর্য্যন্ত অংশে ভূমি স্যাঁতসেঁতে থাকে বলে শাল, শিশু, গর্জন প্রভৃতি চিরহরিৎ উদ্ভিদ গড়ে উঠেছে।
[2] পাইন অরণ্য: পশ্চিম হিমালয়ের 100-200 মিটার উচ্চতায় এবং পূর্ব হিমালয়ের দু-একটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পাইনের বনভূমি গড়ে উঠেছে।
[3] মিশ্র অরণ্য: পূর্ব হিমালয়ের 100-3000 মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের 1500-2000 মিটার উচ্চতায় দেবদারু, ওক, বার্চ, ম্যাপল প্রভৃতি উদ্ভিদসমেত নাতিশিতোয় পর্ণমোচী ও নাতিশিতোয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ একসাথে গড়ে উঠেছে।
[4] সরলবর্গীয় অরণ্য: পূর্ব হিমালয়ের 3000-4000 মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের 2000-4000 মিটার উচ্চতায় ফার, সিডার, লরেল, উইলো সমেত সরলবর্গীয় উদ্ভিদ রয়েছে।
[5] আঙ্গীয় অরণ্য: সরলবর্গীয় অরণ্যের ঊর্ধ্বে পূর্ব হিমালয়ের 4000-5000 মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের 3500-5000 মিটার উচ্চতায়, যেখানে বছরের 3-4 মাস বরফাবৃত থাকে ও বাকি সময় বরফযুক্ত থাকে সেখানে জুনপার, লার্চ, ন্যাকসভমিকা, রডোডেনড্রন, ম্যাকনেলিয়া ও নানাপ্রকার ঘাস জন্মায়। আল্পীয় অরণ্যের ঊর্ধ্বে কোনো উদ্ভিদ জন্মায় না, এটি চিরতুষারবৃত অঞ্চল।
ব্যবহার:- পার্বত্য অরণ্য (সরলবর্গীয় অরণ্য) নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। কোন আসবাবপত্র, (বোর্ড, ফাইবার বোর্ড) কাগজের মন্ড, খেলাধুলায় সরঞ্জাম, যানবাহনের কাঠামো, দেশলাই, প্যাকিং বাক্স, প্লাইউড প্রভৃতি তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
E. ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest)
উপকূল
ও
বদ্বীপ অঞ্চলে যেখানে জলবায়ু উয় আর্দ্র প্রকৃতির ভূ মিসূক্ষ্ম পলিমাটি দিয়ে গঠিত, জোয়ার-ভাটার প্রকোপে দিনে দুবার লবণাক্ত জল প্রবেশ করে এবং মাটি লবণাক্ত সেখানে যে ঘন উদ্ভিদমণ্ডলী গড়ে উঠেছে তা হল ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
অবস্থান:- পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা বদ্বীপের সুন্দরবন, ওডিশার চিলকা উপহ্রদ ও মহানদীর বদ্বীপসংলগ্ন অঞ্চল, অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর বদ্বীপ এবং কোলের ও পুলিকট উপহ্রদ সংলগ্ন অঞ্চল, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল, মালাবার উপকূল, গুজরাটের কয়েকটি অংশে (কাম্বে উপসাগর) ম্যানগ্রোভ বনভূমি দেখা যায়।
পরিবেশ:- উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু, সারাবছর অধিক ও একই উন্নতা (27°C), স্বল্প উয়তার প্রসার (5°C), গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত (150- 200 cm), জোয়ার প্লাবিত কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটি।
উদ্ভিদ:- সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হোগলা, হেঁতাল, গোলপাতা, ক্যাওড়া, বোড়া, পিটুলি, ছাতিম, কেয়ন, বনতুলসী ইত্যাদি 64 প্রজাতির উদ্ভিদ।
বৈশিষ্ট্য:-
[1] জোয়ার প্লাবিত সর্বদা ভিজে মাটিতে জন্মানোর জন্য গাছগুলি সারাবছর সবুজ পত্রে শোভিত চিরহরিৎ হয়।
[2] লবণাক্ত জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসগ্রহণে অসুবিধা হয় বলে একে বিশেষ ধরনের মূল মাটির ওপর আসে। এগুলিকে শ্বাসমূল (pheumatophone) বলা হয়।
[3] নরম কাদামাটিতে জোয়ার-ভাটার জলপ্রবাহ সহ্য করে যাতে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তারজন্য এই অরণ্যের অধিকাংশ বৃক্ষের গোড়ায় ঠেসমূল (Still boot) সৃষ্টি হয় বা স্তম্ভমূল সৃষ্টি হয়।
[4] ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষের কাণ্ড রসালো প্রকৃতির।
[5] এই জাতীয় উদ্ভিদের মূলগুলি খুব দীর্ঘ ও প্রসারিত হয়।
[6]বীজ কাদাময় জলাভূমিতে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য গাছে থাকা অবস্থায় ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হয় একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে (ব্যতিক্রম সুন্দরী)। রাইজোফেরা নামক উদ্ভিদে দেখা যায়।
[7] উদ্ভিদ কাণ্ডের নিম্নাংশ থেকে চ্যাপটা ও তার মতো অস্থানিক মূল বেরোয় একে শ্বাসমূল বলে।
ব্যবহার:-
[1] এই অরণ্যের
বহু গাছ স্থানীয় জ্বালানিরূপে রান্নার কাজে বা কাঠকয়লা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
[2] গেঁওয়া
কাঠ প্যাকিং বাক্স, দেশলাই, কাষ্ঠমণ্ড তৈরিতে, কাঠ-পেনসিল তৈরিতে কাজে লাগে।
[3] এই অরণ্যের পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া হয়। বেড়া ও চাটাই তৈরি করা হয়।
[4] এই অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু ও মোম, লাক্ষা পাওয়া যায়।
[5] সুন্দরী,
গরান প্রভৃতি গাছের কাঠ আসবাবপত্র ও নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
[6] গর্জন গাছের ছাল থেকে মধুমেয় রোগের, বানরকুল থেকে চোখের রোগের ওষুধ প্রস্তুত হয়।
[7] শ্বাসমূল
দ্বারা বোতলের ছিপি তৈরি হয়।
[৪] গেওয়া, গর্জন, ধুন্দুল গাছের ছাল থেকে ট্যানিন তৈরি হয়।
Extra
Knowledge
ভারতের বিভিন্ন অরণ্য গবেষণাগার:-
1. ক্রান্তীয় অরণ্য গবেষণা কেন্দ্র- জব্বলপুর
2. অরণ্য গবেষণা কেন্দ্র- দেরাদুন
3. সামাজিক বনসৃজন কেন্দ্র- এলাহাবাদ
4. আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য গবেষণা কেন্দ্র- জোড়হাট
5. অরণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি কেন্দ্র- রাঁচি
6. উদ্ভিদের প্রজনন সম্পর্কিত গবেষণা কেন্দ্র- কোয়েম্বাটুর
7. কাষ্ঠ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র- বেঙ্গালুরু
8. পরিবেশ উন্নয়নসংক্রান্ত কেন্দ্র- এলাহাবাদ
9. প্রবাল প্রাচীর গবেষণা কেন্দ্র- পোর্টব্লেয়ার
10. অরণ্যের বংশানুগতি সম্বন্ধীয় গবেষণা কেন্দ্র- কোয়াম্বাটুর
11. মরু অঞ্চলের অরণ্য গবেষণা কেন্দ্র- যোধপুর (রাজস্থান)
12. নাতিশীতোয় অরণ্য গবেষণা কেন্দ্র- সিমলা
13. হিমালয় বনভূমি গবেষণা কেন্দ্র- সিমলা (হিমাচলপ্রদেশ)
আরও জানুন: