ভারতের মৃত্তিকা, শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য - Soil of India, Types and Characteristics
বন্ধুরা আজকে আমি নিয়ে এসেছি ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ topic নিয়ে। এটি খুবই একটি মজাদার topic। আজকে আমরা আলোচনা করবো ভারতের মৃত্তিকা সম্পর্কে।আজকে আমরা ভারতের মৃত্তিকা, শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য (Soil of
India, Types and Characteristics) সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি নিচে। এটি মাধ্যমিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং যারা ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা করছে তাদের জন্যও খুবই উপকারী। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share ও করতে পারেন।
ভারতের মৃত্তিকা (Soils of
India)
ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে ভূত্বকের যে স্তর বিশিষ্ট অংশে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে তাকে মৃত্তিকা বলা হয়। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে জলবায়ু উপাদান, শিলাস্তরের প্রকৃতি এবং উদ্ভিদের উপস্থিতির উপর।
ভারতের নানা প্রকার মৃত্তিকা দেখা যায়। যথা-
1. লাল মাটি (Red Soil)
অবস্থান:-
প্রায় সমগ্র দাক্ষিণাত্য মালভূমি, সাঁওতাল পরগনা, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং উত্তরপ্রদেশের কিছু কিছু স্থানে লাল মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- রূপান্তরিত প্রাচীন গ্রানাইট ও নীস শিলার আবহবিকরের ফলস্বরূপ এই মাটির সৃষ্টি হয়।
- এরূপ মাটিতে কাদা ও বাড়ির পরিমাণ প্রায় সমান থাকে।
- ফেরিক অক্সাইড এর পরিমাণ বেশি থাকে বলে মাটির রঙ লাল হয়।
- এরূপ মাটির জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম।
- এই মাটি অনুর্বর প্রকৃতির হয়।
কৃষির উপর প্রভাব:-
লাল মাটি অনুর্বর হওয়ার জন্য এই মাটিতে তাই তেমন কৃষিকাজ করা যায় না। তবে জোয়ার, বাজরা, রাগী, বিভিন্ন তৈলবীজ প্রভৃতি চাষ করা হয়।
2. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (Laterite Soil)
অবস্থান:-
কর্ণাটক ও কেরালার পশ্চিমঘাট, পার্বত্য অঞ্চল, উড়িষ্যা, অন্ধপ্রদেশ, ও তামিলনাড়ুর পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চল, ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্বাংশ, অসম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- এই মাটি অনুর্বর প্রকৃতির।
- এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম।
- অধিক বৃষ্টি যুক্ত অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার ফলে মাটির উপরের স্তরের সিলিকা মাটির নিচের স্তরে চলে যায় ও মাটির উপরের লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কৃষির উপর প্রভাব:-
ল্যাটেরাইট মাটি কৃষিকাজের অনুপযোগী। বর্তমানে জল-সেচ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে কাজুবাদাম, ট্যাপিওকা প্রভৃতি শস্যের চাষ করা হচ্ছে।
3. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা (Desert
Soil)
অবস্থান:-
রাজস্থানের বাগর ও মরুস্থলি অঞ্চল, কচ্ছের রণ অঞ্চল এবং পাঞ্জাব হরিয়ানা কিছু কিছু অংশে এরূপ মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- অধিক বাষ্পীভবনের ফলে মাটির উপরিভাগে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।
- এই মাটি বালুকণা দ্বারা গঠিত বলে জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম।
- অতি অল্প বৃষ্টিপাতের জন্য এই অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া বিশেষ দেখা যায় না।
- এই মাটির স্থানীয় নাম সিরোজেম।
কৃষির উপর প্রভাব:-
এইরূপ মাটিতে জৈব পদার্থ খুব বেশি থাকে। জল সেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে এরূপ মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিকাজ করা যায়। এরূপ মাটিতে বর্তমানে গম, তুলা, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি ফসলের চাষ করা হচ্ছে।
4. কালো মাটি (Black Soil)
অবস্থান:-
মহারাষ্ট্র, গুজরাত পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, অন্ধপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশের কালো মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলার আবহবিকারের ফলে এরূপ মাঝে সৃষ্টি হয়েছে।
- এই মাটির স্থানীয় নাম রেগুর বা রেগাড়া।
- কাদা ও পলির ভাগ বেশি থাকে বলে এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বেশি।
- কালো রঙের এই মাটি অত্যন্ত উর্বর।
- এই মাটিতে লোহা, চুন ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশ প্রভৃতি বেশি থাকে।
কৃষির উপর প্রভাব:-
কালো মাটি অত্যন্ত উর্বর বলে তুলা চাষের বিশেষ উপযোগী। এই কারণে এই মাটিকে কালো তুলা মাটিও বলা হয়। এছাড়া আখ, গম, জোয়ার, বাজরা, চীনাবাদাম, তামাক প্রভৃতি এই মাটির উল্লেখযোগ্য ফসল।
5. পডসল বা পার্বত্য মৃত্তিকা (Podsol Soil)
অবস্থান:-
পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে, পশ্চিমঘাট ও নীলগিরির উঁচু অংশে উদ্ভিদের পাতা পচে এই ধরনের মাটির সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য:-
- এই প্রকার মাটির রং ধূসর বলে একে ধূসর মৃত্তিকাও বলা হয়ে থাকে।
- এই প্রকার মাটি অম্ল প্রকৃতির হয় এবং অম্লের পরিমাণও বেশি থাকে।
- এরূপ মাটি অনুরূপভাবে প্রকৃতির হয়।
- পার্বত্য অঞ্চলের ওক, লরেল, চেষ্টনাট প্রভৃতি গাছের পাতা পচে এই ধরনের অম্লযুক্ত মৃত্তিকার সৃষ্টি করে।
কৃষির উপর প্রভাব:-
পডসল মৃত্তিকা কৃষিকাজের অনুপযোগী। পূর্ব হিমালয়ের ধূসর বাদামী মাটিতে নানা রকমের ফলের চাষ করা হয়। অন্যান্য বিভিন্ন স্থানীয় মাটি যেমন কাশ্মীর উপত্যকার কারেয়া, হিমাচল প্রদেশের কাটিল (পাথুরে মাটি), আপরুন (কাকর মিশ্রিত বেলে মাটি), তালুন (কাদাটে দোয়াশ মাটি) প্রভৃতি মাটিতে ধান, গম, বার্লি প্রভৃতি চাষ করা হয়।
6. পলি মাটি
অবস্থান:-
শতদ্রু-গঙ্গা সমভূমি, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বিভিন্ন নদী উপত্যকা গুলিতে পলিমাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- নদী তীরবর্তী অঞ্চলে পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি জমে এইরূপ আঞ্চলিক মাটির সৃষ্টি হয়।
- নদীর প্রবাহ পথের উঁচু অংশে প্রাচীন পলিমাটিকে ডাঙ্গর এবং নদীর তীরবর্তী নবীন পলিমাটিকে খাদার বলা হয়।
- অনেক সময় অধিক ধৌত প্রক্রিয়ার প্রভাবে এরূপ মাটিতে চুন জাতীয় পদার্থের আধিক্য দেখা যায়।
- অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলে উৎসব ঊসর, কালার প্রভৃতি নুন ও ক্ষারধর্মী প্রাচীন পলিমাটি দেখা যায়।
- গঠন অনুযায়ী এই মাটিকে বেলে, এঁটেল, দোঁয়াশ এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
কৃষির উপর প্রভাব:-
পলিমাটিতে নানা ধরনের জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ থাকায় তা অত্যন্ত উর্বর। এরূপ মাটি কৃষিকাজের বিশেষ উপযোগী। ভারতের অধিকাংশ খাদ্যশস্য পলিমাটিতে উৎপন্ন হয়। ধান, গম, পাট, আঁখ, ডাল, তৈলবীজ, মিলেট প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
7. উপকূলের মাটি (Coastal Soil)
অবস্থান:-
সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে যে পাললিক শিলার স্তর দেখা যায় তা উপকূলের পলিমাটি নামে পরিচিত। পূর্ব উপকূল, পশ্চিম উপকূল, এবং গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, মহানদী, গোদাবরী ও কাবেরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে উপকূলের পলিমাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- সমুদ্রের লবণাক্ত জলের প্রভাবে এই মাটির লবনতার পরিমাণ বেশি থাকে।
- এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে।
কৃষির উপর প্রভাব:-
ধান, আখ, নারকেল এই মাটির প্রধান ফসল। কাবেরী বদ্বীপ অঞ্চলে এত বেশি ধান উৎপন্ন হয় যে এই অঞ্চল কে দক্ষিণ ভারতের শস্যাগার বলা হয়।
8. তরাই মাটি (Tarai Soil)
অবস্থান:-
হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের নদী বাহিত নুড়ি, বালি ও কাকর মিশ্রণে তরাই মাটির সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য:-
- তরাই অঞ্চলের মাটি মোটামুটি ভাবে উর্বর বলে এই মৃত্তিকাতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয়।
- এই মাটিতে বায়ু চলাচল করার ক্ষমতা এবং জলধারণ ক্ষমতা বেশি থাকার জন্য মৃত্তিকায় সবসময় ভিজে ভাব থাকে।
কৃষির উপর প্রভাব:-
তরাই অঞ্চলের জলাভূমি পুনরুদ্ধার করে তরাই মাটিতে নানাবিধ কৃষি কাজ করা হয়। ধান, গম, আখ প্রভৃতি এই মাটির প্রধান ফসল।
9. পার্বত্য তৃণভূমির মাটি
অবস্থান:-
পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের স্বল্প বৃষ্টিপাত যুক্ত তৃণভূমি অঞ্চলে এরূপ মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-
- এরূপ মাটি ছাই ও বাদামী রঙ এর হয়।
- এই মাটি কিছুটা উর্বর ও অম্ল প্রকৃতির।
কৃষির উপর প্রভাব:-
এরূপ মাটিতে স্বল্প পরিমাণে আলু, গম, বার্লি প্রভৃতির চাষ করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশে এরূপ মাটিতে নানাবিধ ফসল চাষ করা হয়।
10. হিমবাহ সৃষ্ট মাটি
অবস্থান:-
হিমালয় পর্বতের অতি উঁচু অংশে হিমবাহ-বাহিত নুড়ি, বালি, কাদা প্রভৃতির মিশ্রণে গ্রাবরেখার স্তর সঞ্চিত হয়। একে হিমবাহ সৃষ্ট মাটি বলে।
বৈশিষ্ট্য:-
- এরূপ মাটি খুবই অগভীর ও অনুর্বর।
কৃষির উপর প্রভাব:-
হিমবাহ সৃষ্ট মাটিতে কৃষিকাজ তেমন হয় না। কোন কোন স্থানে সামান্য পরিমাণে আলু ও বার্লির চাষ করা হয়।
|