খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম - উৎপত্তি, গুরুত্ব, ব্যবহার, উপজাত দ্রব্য ও শ্রেণীবিভাগ কর।

Arpan

 খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম - উৎপত্তি, গুরুত্ব, ব্যবহার, উপজাত দ্রব্য ও শ্রেণীবিভাগ কর।

বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম সম্পর্কে। এখানে আপনারা খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবে যেমন খনিজ তেলের উৎপত্তি, গুরুত্ব, ব্যাবহার, উপজাত দ্রব্য, শ্রেণীবিভাগ, উৎপাদক অঞ্চল, এবং খনিজ তেলের সঞ্চয়, উত্তোলন, বাণিজ্য সম্পর্কে। এটি মাধ্যমিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং যারা ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা করছে তাদের জন্যও খুবই উপকারী। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share করতে পারেন।

খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম

লাতিন শব্দ Petra (পাথর বা শিলা) Olevm (তেল) থেকে পেট্রোলিয়াম শব্দটির উৎপত্তি। তাই ভূ-অভ্যন্তরে শিলার মধ্যে (পাললিক শিলা) সঞ্চিত তেল হল খনিজ তেল

খনিজ তেলের উৎপত্তি

বিজ্ঞানীদের ধারণা 5-6 কোটি বছর আগে মহাদেশের যে অংশ উষ্ণ সমুদ্রের নিচে ছিল সেখানে জন্ম নেয় অসংখ্য উদ্ভিদ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী। উষ্ণ সমুদ্রের ওই অংশে পলি বালি সঞ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভিদ প্রাণীরাশি জমা হতে থাকে। পরে চাপে তাপে পলি বালি পাললিক শিলায় পরিণত হওয়ার সময় ছিল আর ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা জৈব পদার্থ থেকে রাসায়নিক বিবর্তনের জন্ম নেয় হাইড্রোকার্বন যার পরিণতি খনিজ তেল। সছিদ্র পাললিক শিলায় জন্মানো খনিজ তেল চুইয়ে সুবিধা মত স্থানে জমা হয়ে তেলের ভান্ডার গড়ে তোলে। যেখানে এটি জমা হয় সেটি হল ওয়েল ট্রাপ (Oil Trap)

গুরুত্ব

আধুনিক যন্ত্র সভ্যতা অনেকটাই খনিজ তেল নির্ভর। যানবাহনের রসদ, রাস্তা তৈরি, কৃষিতে সার প্রয়োগ প্রভৃতির যোগান আছে খনিজ তেল থেকে। পেট্রোরসায়ন শিল্প (আধুনিক শিল্প দানব) খনিজ তেল নির্ভর। বহুবিধ ব্যবহারের কারণে একে তরল সোনা বলা হয়। অনেক দেশের অর্থনীতি যেমন খনিজ তেল নির্ভর তেমনি এই তরল সোনাকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে অশান্তি, রাজনৈতিক তাল মাটালও কম হয় না।

 

 

ব্যবহার

i) পরিবহন ব্যবস্থায়:- সড়ক, রেল, জলপথ আকাশ পথের সকল যানবাহন খনিজ তেল নির্ভর।

 

ii) বিদ্যুৎ উৎপাদন:- পৃথিবীতে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের 6% হলো ডিজেল চালিত তাপ বিদ্যুৎ। ভারতেও এরূপ কয়েকটি কেন্দ্র আছে।

 

iii) রাস্তা তৈরি:- পাকা রাস্তা বা সড়কপথ নির্মাণের সময়ে পাথরকুচির সাথে মেশানো হয় বিটুমেন বা অ্যাসফল্ট।

 

iv) পেট্রোরসায়ন শিল্প:- খনিজ তেল শোধনকালে উপজাত দ্রব্য হিসেবে পাওয়া যায় ইথিলিন, বেনজিন, প্রপিলিন প্রভৃতি দ্রব্য। এগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে প্লাস্টিক, ফাইবার, পলিথিন, নাইলন, পলিস্টার প্রভৃতি শিল্প।

 

v) পিচ্ছিলকারক তেল:- সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ যন্ত্রকে সচল রাখতে বা ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় খনিজ তেলজাত দ্রব্য লুব্রিকেটিং ওয়েল। 

খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য

ক্রুড ওয়েল (Crude Oil) শোধন করে পাওয়া যায়

  • জ্বালানি তেল (পেট্রোল, অ্যাডিয়েশন পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন
  • বিটুম্যান বা অ্যাসফল্ট
  • লুব্রিকেটিং অয়েল 
  • প্যারাফিন 
  • ইথিলিন 
  • প্রপিলিন 
  • বেনজিন 
  • সালফার প্রভৃতি 

 

খনিজ তেলের শ্রেণীবিভাগ

অপরিশোধিত তেলের পাতন ক্রিয়ায় যা পড়ে থাকে তার ওপর ভিত্তি করে খনিজ তেল কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

 

i) প্যারাফিন যুক্ত তেল:- উৎকৃষ্ট মানের খনিজ তেল, রঙ সবুজ থেকে বাদামী। উঁচুমানের লুব্রিকেটিং তেল এর থেকে পাওয়া যায়। 

 

ii) অ্যাসফল্ট যুক্ত তেল:- মূলত ন্যাপথিনভিত্তিক হাইড্রোকার্বন। রঙ কালো হয় এবং চটচটে প্রকৃতির।

 

iii) মিশ্র শ্রেণীর তেল:- প্যারাফিন অ্যাসফল্ট সমপরিমাণ থাকে। এর থেকে জ্বালানি উপজাত সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়।

খনিজ তেল উৎপাদক অঞ্চল

ভারতের খনিজ তেল উৎপাদক অঞ্চল গুলিকে 4টি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়। 

1.উত্তর-পূর্ব ভারতে তৈল খনি 

2.পশ্চিম ভারতের তৈল খনি 

3.আরব সাগরের দরিয়া অঞ্চলের তৈল খনি 

4.দক্ষিণ ভারতের তৈল খনি 

1. উত্তর-পূর্ব ভারতের তৈলখনি

i) অসম:- খনিজ তেল উৎপাদনে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে অসম তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য খনি গুলি হল

  • ডিগবয় (ভারতের প্রাচীনতম তৈল খনি)
  • নাহারকাটিয়া 
  • মোরান 
  • হুগরিজান 
  • রুদ্রসাগর 
  • লাকুয়া 
  • টিকয়
  • গোলেকি 
  • অঙ্গুরি 
  • বোরজোলা প্রভৃতি

ii) অরুনাচল প্রদেশ:- এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য তৈলখনি গুলি হল

  • খারসাং  
  • নিংঙ্গারু 

iii) নাগাল্যান্ড অসম সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বোরহোল্লা

2. পশ্চিম ভারতের তৈল ক্ষেত্র

i) গুজরাট:-

খনিজ তেল উৎপাদনে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে গুজরাট তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য তৈলখনি গুলি হল-

  • দহেজ 
  • আঙ্কলেশ্বর 
  • কোসাম্বা 
  • ওলপদ 
  • মহেসানা 
  • কালোল 
  • কাড়ি
  • ধোলকা 
  • সানন্দ 

3. আরব সাগরের দরিয়া অঞ্চলের তৈল ক্ষেত্র

খনিজ তেল উত্তোলনে এই অঞ্চল ভারতের প্রথম স্থান অধিকার করে। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য তৈলখনি গুলি হল

  • মুম্বাইয়ের 173 km দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরের মহীসোপানে প্রায় 2000 বর্গকিমি অঞ্চলে বিস্তৃত মুম্বাই হাই হলো ভারতের অন্যতম সমুদ্রগর্ভের তৈল খনি যা ভারতের প্রায় 50% খনিজ তেল উৎপাদন করে প্রথম স্থানে রয়েছে। সাগর সম্রাট, সাগর বিকাশ প্রভৃতি তৈলকূপ খননকারী ভাসমান প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে এখানে সমুদ্রগর্ভ থেকে তেল তোলা হয়। 
  • এছাড়া মুম্বাইয়ের 95 km উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত পান্না।
  • 100 km উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত মুক্তা তৈল ক্ষেত্র দুটি থেকে ONGC, Reliance Industries Limited ব্রিটিশ গ্যাস খনিজ তেল আহরণ করে।

4. দক্ষিণ ভারতের তৈল ক্ষেত্র

দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা গোদাবরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত-

i) অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের:-

  • রাজোল 
  • লিনগালা

ii) তামিলনাড়ু রাজ্যের:-

  • আরিয়াক্কামঙ্গলম
  • কোভিলাপ্পালা 
  • নরিমানম 
  • ভুবনগিরি 

iii) তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান অঞ্চলে অবস্থিত

  • কাবেরী বেসিন 
  • KG D-6
  • রাড্ডা 
  • পদুচেরি শহরের 80 km দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান অঞ্চলে অবস্থিত Py-6 তৈলখনি থেকে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়।

খনিজ তেলের সঞ্চয়

ভারতে তেলের সঞ্চয় মোটেই আশানুরূপ নয়। এদেশে মাত্র 76 কোটি মেট্রিক টন আহরণযোগ্য তেলের সঞ্চয় রয়েছে (পৃথিবীর মাত্র 0.3%) সবচেয়ে বেশি তেলের সঞ্চয় রয়েছে আরব সাগরের সমুদ্রগর্ভ অঞ্চলে।

খনিজ তেল উত্তোলন

ভারতে খনিজ তেল উত্তোলন মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। ভারতে মোট তৈল উত্তোলনের পরিমাণ 3.78 কোটি টন যা পৃথিবীর মোট উত্তোলনের প্রায় 1% খনিজ তেলের প্রায় 48% উত্তোলিত হয় সমুদ্রগর্ভ থেকে গর্ব থেকে এবং বাকি 52% দেশের অভ্যন্তরে।

বাণিজ্য

ভারতে খনিজ তেলের সঞ্চয় উত্তোলন খুবই কম। দেশের প্রয়োজনের 85% তেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। ভারতে প্রায় 19.50 কোটি মেট্রিক টন শোধিত তেল এবং 2.33 কোটি মেট্রিক টন অশোধিত তেল আমদানি করে। ভারত সৌদিআরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (UAE), নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে খনিজ তেল আমদানি করে।

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।