সাঁওতাল বিদ্রোহ
সূচনা :
ব্রিটিশ শাসনে ও শোষণে অতিষ্ট কৃষক আদিবাসী বিদ্রোহের ইতিহাসে সাঁওতাল বিদ্রোহ (1855 খ্রি) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রেক্ষাপট :
সাঁওতালরা ছিল সৎ, সরল, কঠোর পরিশ্রমী ও প্রভুভক্ত পরাময়। তাদের সরলতার সুযোগে ব্রিটিশ শাসক ও দেশীয় মহাজন কর্মচারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছিলো।
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ বা প্রেক্ষাপট
1. জমিদারদের অত্যাচার :
সাঁওতালরা 'দামিন - ই - কো ' বা মুক্ত অঞ্চলে বসবাস বিশ্বাসী। তারা অরণ্য পরিষ্কার করে চাষের জমি বৃদ্ধি করে। ওই সকল জমির ওপর জমিদারেরা ভূমি রাজস্ব আদায়ে অত্যাচার করে।
2. ব্যবসায়ে কারচুপি :
সাঁওতালদের অজ্ঞ ও মূর্খতার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ভুয়ো বাটখারা ব্যবহার করে জিনিসপত্রের ওজনে কারচুপি করে তাদের প্রতারণা করেছিলো।
3. মহাজন শোষণ :
ক্যাপ্টেন শেরওয়েল মহাজন শোষণ কে প্রধান দায়ী করেছেন এই বিদ্রোহের জন্য। কারণ মহাজনেরা তাদের ধার দেওয়া টাকার উপর 500% সুদ আদায় করতো।
4. নীলকরদের অত্যাচার :
নীলকর সাহেবরা সাঁওতালদের জোর করে নীল চাষে বাধ্য করতো।
5. রেল ঠিকাদারি শোষণ :
লর্ড ডালহৌসি সময়ে রাজমহল, রামপুরহাট, ভাগলপুর প্রভৃতি অঞ্চলে রেল ঠিকাদারেরা তাদের মজুরি থেকে বঞ্চিত করেছিলো। Friend of India পত্রিকায় উল্লেখ্য 'রাজমহলের রেল কর্মচারীদের হাতে সাঁওতালদের নিগ্রহ '।
6. খ্রিষ্টান ধর্মান্তকরণ :
খ্রিষ্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের জোর পূর্বক খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করণের চেষ্টা করলে সধর্মে বিশ্বাসী সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
7. দেওয়ানী / ফৌজদারি আইন :
বাংলার ছোট লাট ফ্রেডারিক হ্যালিডের নির্দেশে সাঁওতালরা এই দুই আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু আইনের জটিলতা ও বহুব্যয়িতা তাদের পছন্দের বাইরে ছিল।
8. পক্ষী ও নারীত্ব হরণ :
সাঁওতালরা হাস, মুরগি, ছাগল পালন করতো। রেল ঠিকাদার ও মহাজনেরা তাদের পালিত পশু পক্ষী জোর করে নিয়ে পালাত। এছাড়া সাঁওতাল রমণীর নারীত্ব হরণ করলে তারা বিদ্রোহী হয় ওঠে।
বিদ্রোহ :
অবশেষে সাঁওতালরা সিধু ও কানহু মাঝির নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
আরো জানুন :