সামুদ্রিক তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এর বর্ণনা করো।

সামুদ্রিক তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এর বর্ণনা করো।, সমুদ্রের সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

সামুদ্রিক তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এর বর্ণনা করো।

সমুদ্র সৈকত বা বেলাভূমি :

তরঙ্গ বাহিত নুড়ি, কাঁকর, বালি ইত্যাদি তটভূমির উপর সঞ্চিত হয়ে যে মৃদু ঢালু সমতল ভূমি গড়ে তোলে তাকে সমুদ্র সৈকত বা বেলাভূমি বলে।

বৈশিষ্ট্য :
1. ঊর্ধ্ব সৈকতে স্থূল পদার্থ নিম্ন সৈকতে সূক্ষ্ম পদার্থের সঞ্চয় ঘটে।
2. এখানে ভূমির ঢাল ১° থেকে ২° হয়।
3. এখানে স্থলজাত পদার্থের সঞ্চয় বেশি ঘটে।
4. এটি সুনামি দ্বারা সম্পূর্ণ প্রসারিত হতে পারে।

শ্রেণীবিভাগ :
a) উবুল সৈকত
b) বালুকাময় সৈকত
c) পকেট সৈকত
d) অর্ধ চন্দ্রাকৃতি সৈকত

উদাহরন :

দীঘা , গোয়া উপকূলে দেখা যায়

সামুদ্রিক বাঁধ :

তরঙ্গ ও স্রোতবাহিত নুড়ি, বালি, কাকর ইত্যাদি বস্তু নিমজ্জিত বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে সঞ্চিত হয়ে যে স্তূপের সৃষ্টি করে তাকে সামুদ্রিক বাঁধ বলে।

শ্রেণীবিভাগ :
সামুদ্রিক বাঁধ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে --

A) পুরোদেশীয় বাঁধ :

বাঁধের দুই প্রান্ত যখন স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে উপকূলের সমান্তরালে আংশিক নিমজ্জিত হয়ে অবস্থান করে তখন তাকে পুরোদেশীয় বাঁধ বলে।
এই বাঁধের পশ্চাতে উপ হ্রদের সৃষ্টি হয়।

উদাহরন :
উড়িষ্যা উপকূলে এই বাঁধ দেখা যায় এবং চিলকা একটি উপহ্রদ।

B) অনুতটীয় বাঁধ :

উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে কিছুটা দূরে অনুতটীয় অংশে বালির বাঁধকে অনুতটীয় বাঁধ বলে। উচ্চ জোয়ারে এই বাঁধগুলি ডুবে যায়।

উদাহরন :
গোয়া উপকূলে এসব বাঁধ দেখা যায়।

C) প্রতিবন্ধক বাঁধ :

যখন পুরোদেশীয় বাঁধ সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে তখন তাকে প্রতিবন্ধক বাঁধ বলে।
এই বাঁধ দ্বারা ঘেরা দ্বীপকে প্রতিবন্ধক দ্বীপ বলে।

উদাহরন :
টেক্সাস উপকূলে এমন বাঁধ দেখা যায়।

স্পিট:

যখন কোন বাঁধের এক প্রান্ত স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং অপর প্রান্ত সমুদ্রের দিকে প্রসারিত থাকে তখন তাকে স্পিট বলে।

শ্রেণীবিভাগ :
প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্পিট বিভিন্ন প্রকার হয় --

A) হুক স্পিট :

স্পিটের প্রসারিত অংশ যখন স্থলভাগের দিকে বেঁকে যায় তখন তাকে হুক স্পিট বলে।
পরপর একাধিক হুক স্পিট গঠিত হলে তাকে যৌগিক হুক স্পিট বলে।

উদাহরন :
অন্দ্র উপকূলে দেখা যায়।

B) ঘূর্ণন স্পিট :

তরঙ্গের ক্রমাগত দিক পরিবর্তনের ফলে স্পিট যখন ঘূর্ণির আকারে গড়ে ওঠে তখন তাকে ঘূর্ণন স্পিট বলে।

উদাহরন :
উত্তর ভারত মহাসাগরে দেখা যায়।

C) কাস্পেট স্পিট :

যখন দুটি পুরোদেশীয় স্পিট দুদিক থেকে ক্রমশ বাড়তে বাড়তে পরস্পর মিলিত হয় তখন তাকে কাস্পেট স্পিট বলে।

উদাহরন :

কেরল উপকূলে দেখা যায়।

টম্বোলো :

টম্বোলো একটি ইতালীয় শব্দ যার অর্থ দ্বীপ সংযোগকারী বাঁধ অর্থাৎ কোন সামুদ্রিক বাঁধ একটি বা দুটি দ্বীপকে উপকূলের সঙ্গে যুক্ত করে তখন তাকে টম্বোলো বলে। 

 বৈশিষ্ট্য :
 1. এটি উপকূলের সঙ্গে সেতু রূপে কাজ করে।
 2. এখানে লেগুন দেখা যায়।
 3. একাধিক টম্বোলোর অবস্থানকে টম্বোলি বলে।

উদাহরন :
মান্নার উপসাগরের হেমার দ্বীপটি টম্বোলো দ্বারা গঠিত।

উপ হ্রদ বা লেগুন :

উপকূল অঞ্চলে উন্মুক্ত সাগর থেকে বালুচর ও প্রবাল দ্বীপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন নোনা জলের হ্রদকে লেগুন বলে।

বৈশিষ্ট্য :
1. এটি বিক্ষিপ্ত বা আংশিক আবদ্ধ উপকূলে লবণাক্ত জলভাগ।
2. এর মধ্যস্থিত জল শান্ত প্রকৃতির হয়।
3. এখানে অনেক সময় ম্যানগ্রোভ দেখা যায়।

উদাহরন :
ভারতের বৃহত্তম লেগুন হল উড়িষ্যার চিলকা হ্রদ।

আরো প্রশ্নাবলী

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।