গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ, গ্রীন হাউস গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের উপায় লেখো

গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ

1. জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে co2 বৃদ্ধি পায়।
2. জ্বালানি কাঠের ব্যবহারের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটে।
3. পচনশীল জৈব আবর্জনা, গবাদিপশুর গোবর জলাভূমি ও ধানক্ষেত থেকে নির্গত গ্যাসের ফলে মিথেনের বৃদ্ধি ঘটে।
4. অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের ফলে নাইট্রাস অক্সাইড বৃদ্ধি পায়।
5. রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়া, ইলেকট্রনিক্স শিল্পপ্রক্রিয়ার ফলে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বৃদ্ধি পায়।
6. অরণ্য হনন ও সমুদ্র জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও অধি শোষণ এর ক্ষমতা হ্রাস পায়।

গ্রীন হাউস ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাব

1. গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তন

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের গড় উষ্ণতা 1.5° সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের সঞ্চয় বিশেষভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঞ্চয় যদি আরো বাড়ে তাহলে গড় উষ্ণতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

2. হিমবাহের গলন
বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কুমেরু মহাদেশের গভীর পুরু বরফের স্তর ও অন্যান্য মহাদেশীয় ও পার্বত্য হিমবাহ হু হূ করে গলতে থাকবে এবং বরফ গলা জল সমুদ্রের জলের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেবে।

3. শস্য উৎপাদনের স্থান পরিবর্তন ও সংকোচন
জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের স্থান পরিবর্তন ঘটবে এবং কৃষি জমির পরিমাণ সংকুচিত হবে।

4. প্রজাতির বিলুপ্তি
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জীব বৈচিত্র্য বিপন্ন হবে, অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাবে।

5. দাবানল
উষ্ণতার বৃদ্ধির ফলে গাছে গাছে ঘষা লেগে দাবানলের মাধ্যমে বনভূমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

6. ভৌম জলের ঘাটতি
গ্রীন হাউস গ্যাসের প্রভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বৃষ্টিপাত ও মৃত্তিকাস্থিত জলের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং ভৌম জলের ভান্ডারে টান পড়বে।

7. রোগের প্রকোপ

বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়তে থাকলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকবে।

8. অন্যান্য সমস্যা
এর ফলে তৈরি হওয়া ঝড়, খরা, বন্যা ইত্যাদি অনেক মানুষের প্রাণ নেবে। এরপর বহু মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে ফলে উদ্বাস্তু সমস্যা দেখা দেবে।

গ্রীন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের উপায়

1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস
জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব।

2. অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি
অচিরাচরিত শক্তি, সৌরশক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি, বায়ু শক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।

3. ফ্রেয়ন গ্যাসের উৎপাদন বন্ধ করা
ফ্রেয়ণ গ্যাসের CFC11 এবং CFC12 উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে।

4. বনসৃজনে উৎসাহ দান
অরণ্য ছেদন হ্রাস, বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন এর দিকে নজর দিতে হবে যাতে গাছপালা বাতাসের অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

5. প্রযুক্তির উন্নতি

গাড়ি ও শিল্প ক্ষেত্র ব্যবহৃত ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়িয়ে পেট্রোল ও ডিজেলের অপচয় ও ব্যবহার কমিয়ে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের সঞ্চয় কমাতে হবে।

6. আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ
মিথেন উৎপাদনকারী আবর্জনা সঠিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে মিথেনের সঞ্চয় কমাতে হবে।

7. পরিবর্তন দ্রব্যের ব্যবহার
কাঠের পরিবর্ত দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।

8. জনসচেতনতা বৃদ্ধি
জনগণকে গ্রীন হাউজ গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

9. গবেষণায় উৎসাহ দান
গ্রীন হাউজ গ্যাস কমানোর উপায় উদ্ভাবনের জন্য গবেষণার কাজে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

10. জ্বালানির সাশ্রয়
ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা হ্রাস করে কার পোলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব।

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।