Class 12 History Suggestions
1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মন্বন্তরের কারণ গুলি হলো -
1. পূর্ববর্তী খাদ্য সংকট
1940 -41 খ্রিস্টাব্দ অবিভক্ত বাংলায় সীমিত আকারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল, তখনকার সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে ব্যাপক প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষা পেলেও খাদ্যের অভাবে বাংলার মানুষের প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে এসেছিল।
2. উৎপাদন হ্রাস
এই সময় বিভিন্ন কারণে বাংলার খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল । 1942 খ্রিস্টাব্দে অক্টোবরে একটি স্লাইকোন ও তিনটি ঝড় বাংলায় 450 বর্গ মাইল এলাকাজুড়ে ফসল নষ্ট করে দিয়েছিল। এছাড়াও বহু এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছিল এবং এই সংরক্ষিত শস্য নষ্ট হয়েছিলো
3. রোগাক্রান্ত কৃষি
আবার কৃষিক্ষেত্রে ব্রাউন স্পট নামক এক ধরনের ধসা রোগ ধান গাছ কে নষ্ট করে দিয়েছিল এবং এর ফলে প্রায় 50 থেকে 90 শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির ধান গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
4. বার্মা থেকে চাল আমদানি বন্ধ হওয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বার্মার ওপর জাপানের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, এর ফলে সেখান থেকে বাংলা তথা ভারতে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
5. ভারতে জাপান আক্রমণের আশঙ্কা
ভারতে জাপানি আক্রমণের ভয়ে ব্রিটিশ বাহিনী মেদিনীপুর ,24 পরগনা, বাঘরগঞ্জ প্রকৃতি জেলা থেকে উদ্বৃত্ত ধান সরিয়ে নেই ফলে কৃত্রিম খাদ্য সংকট দেখা যায়।
বাংলার মন্বন্তর এ উইনস্টন চার্চিল এর ভূমিকা
1. খাদ্যশস্য পাঠাতে অস্বীকার
বাংলার মন্বন্তর এর জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল যথেষ্ট দায়ী ছিলেন। বাংলার চরম খাদ্যাভাবের সময় অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা কানাডা জাহাজে করে বাংলায় খাদ্যশস্যে পাঠাতে চাইলেও চার্চিল যুদ্ধের কাজে জাহাজের সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খাদ্য পরিবহন এর কোন জাহাজ ছাড়তে রাজি হয়নি।
2. সেনার জন্য খাদ্যের রপ্তানি
বাংলায় খাদ্য ভাব সত্ত্বেও সরকার যুদ্ধের সময় ভারত থেকে প্রচুর খাদ্যশস্য বাইরে রপ্তানি করে। সৈন্যদের জন্য কি পরিমান খাদ্য শস্যের প্রয়োজন তা সরকার সঠিকভাবে জানতে পারেনি, ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শস্য সরবরাহ করে সেনাদের চাহিদা নিশ্চিত করতে গিয়ে সেখানে বহু খাদ্যের অপচয় হত ফলে খাদ্য সংকট আরো বৃদ্ধি পায়।
3. সরকারের উদাসীনতা
বাংলার নেতা ফজলুল হক খাদ্য সংকটের বিষয়ে সরকারকে 1942 খ্রিস্টাব্দে হুঁশিয়ারি দিল সরকারি তাতে কার্যবতি করেনি। 1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় খাদ্য সংকট শুরু হলে বাংলার প্রাদেশিক সরকার এর মোকাবিলা মোটেই তৎপরতা দেখায়নি। সরকারের এই উদারতা পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সবশেষে বলা যায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের মৃত্যুর সঠিক হিসাব ব্রিটিশ সরকার কখনো প্রকাশ করেন। অনুমান করা হয় যে এই দুর্ভিক্ষ বাংলার অন্তত 40 থেকে 70 লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। গ্রাম বাংলা একেবারে শ্মশানে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সাহিত্য শিল্পকলায় এই দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র ধরা পড়ে।