ইউরোপীয় মহাদেশে খ্রিস্টীয় সড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক সময়ে অর্থনীতিতে এক নতুন মতবাদের উদ্ভব ঘটেছিল তার নাম মার্কেন্টাইল মতবাদ ।
এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ।
মার্কেনটাইল মূলধন :-
অ্যাডাম স্মিথ তার ওয়েলথ অফ নেশন্যাল গ্রন্থে মার্কেনটাইল মতবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন । পঞ্চদশ ও সড়স শতকে ইউরোপে ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে বিভিন্ন ভৌগলিক আবিষ্কার বাণিজ্যের পথকে মসৃণ করে । ইংল্যান্ড , ফ্রান্সের মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশিও ও বৈদেশিক বাণিজ্য উৎসাহিত হয় । এর ফল স্বরূপ ইউরোপে পুজিগত পরিবর্তন আসতে শুরু করে । এই পরিবর্তনের ধারাকে বানিজ্যিক পুঁজিবাদ বা মার্কেনটাইল মতবাদ বলা হয় ।
উদ্দেশ্য :
ইউরোপের দেশগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই মূলধন নীতি গ্রহণ করেছিল ।
১. এর মাধ্যমে মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রিয় শক্তি বৃদ্ধি করতে ছেয়েছিল ।
২. ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধির মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নতি সাধন করা ।
৩. আমদানি কমিয়ে উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা ।
৪. সোনা ও রূপার সঞ্চয় বৃদ্ধি করা ।
মার্কেনটাইল নীতির প্রয়োগ :
ইউরোপের দেশগুলো মার্কেনটাইল নীতি অনুসরণের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে শুরু করে ।
১. ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথের আমলে এই নীতি প্রথম গৃহীত হয় । এবং এলিভার ক্রম - ওয়েলের আমল পর্যন্ত ইংল্যান্ডে তা বলবৎ ছিল ।
২. ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্দশ লুই এর আমলে এই নীতি গৃহীত হয় এবং এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে লুই এর প্রধানমন্ত্রী কলকর্ট ফ্রান্সের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটান ।
মার্কেনটাইল নীতির প্রভাব :
১. এই নীতির মাধ্যমে মানুষের মনে এই ধারণা জন্ম নেয় যে আর্থিক সমৃদ্ধি শক্তি ও প্রতিপত্তির উৎস ।
২. এই নীতি পরিবর্তনকালীন পুঁজিবাদী উত্থানে সাহায্য করেছিল ।
৩. ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে উপনিবেশ দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করে । এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকাতে ইউরোপীয়দর উপনিবেশ গড়ে ওঠে । ফলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটে ।
সমালোচনা :
মার্কেনটাইল নীতিকে অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন -
১. ডেভিড হিউম্ বলেন ইউরোপের দেশগুলি এই নীতি দ্বারা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারেন ।
২. স্মিথের মতে এই মূলধন ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রের মধ্যে এক অশুভ সমঝোতা গড়ে উঠেছিল ।
৩. এই নীতিতে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা, বাস্তবতা বোধ, বানিজ্যিক লাভ লোকসান প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল ।