আরাকান রাজসভার দুজন কবির নাম লেখ ও তাদের কবি প্রতিভা আলোচনা করো।

দৌলত কাজী ও সৈয়দ আলাওল টীকা লেখ 

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে আরাকানের রোসাঙ রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতায় লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত মানবিক ভাবযুক্ত একজাতীয় রোমান্স সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল। এই রোসাঙ্গ রাজসভার দুজন কবি হলেন দৌলত কাজী ও সৈয়দ আলাওল।

দৌলত কাজী :

রোসাঙ রাজসভার অন্যতম কবি হলেন দৌলত কাজী। আরাকান রাজ শ্রী সুধর্মার সমর সচিব আশরাফ খান এর অনুরোধে দৌলত কাজী রচনা করেন সতীময়না বা লোরচন্দ্রানী। সুধর্মার রাজত্বকালে ১৬২২ - ১৬৩৮ খ্রি পর্যন্ত। সুতরাং কবি দৌলত কাজী এইসময় বর্তমান ছিলেন। তিনি সাধণ কবি রচিত হিন্দি মৈনাসত কাব্যটি কে আশ্রয় করে লেখেন সতীময়না। কিন্তু কবির আকস্মিক মৃত্যুতে গ্রন্থটি অসমাপ্ত অবস্থায় ছিল সমাপ্ত করেন কবি আলাওল।

দৌলত কাজী সম্পূর্ণ ও মৌলিক কাহিনী স্রষ্ঠা না হলেও রেখে গেছেন প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। তিনি প্রচলিত লোককাহিনী কে একটি রূপক ধর্মী রোমান্টিক আখ্যায়িকা হিসেবে প্রথম বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করেন। ময়নামতির সতীত্ব, লোরের যৌবন চাঞ্চল্য, চন্দ্রানী নটিপনা ও অসংজম, রাজপুত ছাতনার লাম্পট্য প্রভৃতি রচনায় কবি প্রতিভার মৌলিকতা প্রমাণিত। দৌলত কাজীর রচনার শত:বিকশিত সারল্য ও অনায়াস সরসতা। তার কাব্যকে লোক জীবনের সার্থক রোমান্টিক প্রণয় গাথার শিল্পমূল্য দান করেছে। সুকুমার সেনের কথায় "মুসলমান কবিদের মধ্যে তিনি যে সর্বশ্রেষ্ঠ আসন দাবি করতে পারেন তাতে সন্দেহ নেই।"

সৈয়দ আলাওল :

রোসাঙ রাজসভা যেসব কবি বর্তমান ছিলেন তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় আলাওল ছিল শ্রেষ্ঠ। সৈয়দ আলাওয়াল ছিল পন্ডিত ও গুণী ব্যক্তি। বাংলা ছাড়া ব্রজবুলি, সংস্কৃত, হিন্দি, ফার্সী, আরবি ভাষা তিনি ভালোভাবে জানতেন। তিনি অন্তত দুটি কাব্য রচনা করেন পদ্মাবতী, সতীময়না (তৃতীয় খন্ড), সপ্তপয়কর, তোহফা, সেকেন্দারনামা প্রভৃতি।

অবিস্মরনীয় রোমান্টিক প্রণয়গাঁথা 'পদ্মাবতী ' আলাওলের কেবল প্রথম রচনা নয় শ্রেষ্ঠ রচনাও। অযোধ্যার কবি 'জায়সির পদুমাবত' কাব্যের অনুবাদ রূপে বলা হলেও এটা ঠিক ভাবানুবাদ - 'স্থানে স্থানে প্রকাশিনু নিজমন উক্তি '। সৈয়দ আলাওয়াল ছিলেন সৌন্দর্য কত প্রাণ সত্যকার কবি। জনৈক ঐতিহাসিক পদ্মাবতী কে বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঐতিহাসিক রোমান্সের মর্যাদা দান করে বলেছেন " বঙ্গ সাহিত্যের ইতিহাসে সম্ভবত ইহাই প্রথম সত্যকারের ব্যাক্তি সাহিত্য"। সপ্তদশ শতকে রচিত হলেও ইহা উদার ও সর্বজনীন।

পদ্মাবতীর তুলনায় আলাওলের অন্যান্য গ্রন্থ গুলি সর্বপ্রকারেই হীন। হতে পারে কবির বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে তার কল্পনা শক্তির নুণ্যতা ঘটেছিল।

    এই চ্যাপ্টারের আরো অন্যান্য প্রশ্নগুলিও দেখুন

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।