WhatsApp Channel
Join Now
Telegram Group
Join Now
YouTube Channel
Subscribe

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান ( Ishwar Chandra Vidyasagar Contribution )

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ( ishwar chandra vidyasagar reforms)


বিদ্যাসাগর ও সমাজ সংস্কার

উনিশ শতকে  ভারতবর্ষের যে কয়েকজন মনীষীর জন্ম গ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ।

শিক্ষা সংস্কার :

বিদ্যাসাগর শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং শিক্ষার প্রসারের মাধ্যম, সমাজ সংস্কারের কথা ভেবেছিলেন। এই জন্য তিনি  1851-1854 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শিক্ষা বিভাগের কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ করেন্ -

1. মাতৃভাষা বাংলা শিক্ষার মাধ্যমে হবে।

2. শিক্ষাকার্যে পশ্চিমী দর্শন ও বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।

3. শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য হবে সমাজকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার মুক্ত করে শিক্ষার্থীকে সমাজে সামাজিক করে তোলা।

বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন নারীজাতি অনগ্রসর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকলে সমাজ পিছিয়ে থাকবে। স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি রামগোপাল ঘোষ, রাধাকান্ত দের উদ্যোগে সুবাদে তিনি পঁয়ত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয়, 100 টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হলো 1849 খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় হিন্দু ফিমেল স্কুল স্থাপন। সংস্কৃত শিক্ষা বিস্তারের জন্য অ ব্রাহ্মণ ছাত্রদের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়।

বিদ্যালয় স্থাপন :
বিদ্যাসাগর শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে জোর দিয়েছিলেন বিদ্যালয় স্থাপনের ওপর। হার্ডিঞ্জ 1844 খ্রিস্টাব্দে বাংলা স্কুল স্থাপনের উপর বিদ্যাসাগর কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় কয়টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যার বেশিরভাগই নিজের খরচে চলত। এছাড়া 1872 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের খরচে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

নারী শিক্ষার ভূমিকা :
বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন সমাজে নারীদের যদি শিক্ষিত না করা হয় তাহলে সমাজে সভ্যতার অগ্রগতি হতে পারে না, সে কারণে তিনি নারী শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এছাড়া পঁয়ত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয় সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, প্রায় এতে 1300 ছাত্রী প্রতিষ্ঠার  সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।

মাতৃভাষায় শিক্ষাদান :
মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ওপর বিদ্যাসাগর জোর দিয়েছিলেন। তবে পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্ব কি অস্বীকার  করেননি, পাশাপাশি তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

পাঠ্যপুস্তক রচনা :
শুধুমাত্র বিদ্যালয় স্থাপন ও পাঠ্যপুস্তক রচনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বর্ণপরিচয়, কথামালা, নীতিবোধ, চৈতালি, সংস্কৃত শিক্ষার জন্য সংস্কৃত ব্যাকরণ এ উপ মনিকা ও ব্যাকরণ কৌমুদী প্রকৃতি রচনা করেন। এছাড়াও আখ্যানমঞ্জুরী, শব্দ মঞ্জুরী, শ্লোক মঞ্জরী রচনা করেছিলেন। এছাড়া শকুন্তলা, সীতার বনবাস প্রভৃতি আলোচনার মাধ্যমে বাংলা গদ্য লেখার পথ রচনা করেছিলেন।

নিয়মকানুন তৈরি :

শিক্ষার কাজে তিনি বেশ কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ অবৈধ সন্তানরা সংস্কৃত পড়তে পারবে এই নীতি তুলে দিয়ে সকল বর্ণহিন্দু ছাত্রদের জন্য সংস্কৃত পড়ার সুযোগ করে দেন। এছাড়াও শিক্ষকদের ইচ্ছেমতো আসা যাওয়া বন্ধ করে নিয়মকানুন প্রবর্তন করেন এমনকি রবিবার ছুটির দিন ঘোষণা করেন।

সমাজ সংস্কার :
শিক্ষা সংস্কারের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার চেষ্টা ছিল নারীর সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন করা।

বিধবা বিবাহ :
সমাজ সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল বিধবা বিবাহ প্রচলন। বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এই বিষয়ে তিনি 1855 খ্রিষ্টাব্দের পুস্তিকা লিখেছিলেন। বাংলায় প্রথম বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় 1856 খ্রিস্টাব্দে 7 ই ডিসেম্বর। নিজ উদ্যোগে ও নিজ অর্থ ব্যয় করে তিনি বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন।

বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ বিরোধিতা :
বিদ্যাসাগরের জীবনে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলেন। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন ও প্রতিবাদ করেছেন। যার ফলে আইন প্রণয়ন করা হয় বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন 10 বছর ধার্য করা হয়।

কুসংস্কার :
এছাড়াও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেমন গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন, কুষ্ঠরোগী হত্যা, অস্থিরতা জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি দীর্ঘ লড়াই করেছিলেন।

মূল্যায়ন :
ভারতীয় সমাজ সভ্যতায় বিদ্যাসাগরের অবদান অস্বীকার করা যায় না। মাইকেল-মধুসূদন-দত্ত বলেছিলেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি মিশ্রিত হয়েছিল প্রাচীর প্রজ্ঞা ও পশ্চিমের অফুরন্ত কর্মশক্তি ও বাঙালির হৃদয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ছিলেন এই ভিকুর দেশে একমাত্র পুরুষ সিংহ।
■ More Posts from -
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url